জাতীয় শিশু দিবস এবং তাঁর আদর্শ

রাশেদা খালেক

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস। এই মাসের তিনটি দিন, তিনটি তারিখ বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং বাঙালি জাতির জীবনে ধ্রুবতারার মতো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে, আলো ছড়াচ্ছে, পথ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি সেই আলোর পথ ধরে সামনের পানে এগিয়ে চলেছে

এই বিশ্বে যুগে যুগে কালে কালে এমন কিছু মহামানবের জন্ম হয়, যাঁরা দেশ-জাতি-সমাজের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে যান। এই সব মহামানবদের মৃত্যু নেই, লয় নেই, ক্ষয় নেই। এঁরা মরেও অমর হয়ে থাকেন। এঁরা চিরঞ্জীব। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সেই দেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তির জরিপ করেছেন। এই জরিপে দেখা গেছে, জন-মানুষ অগ্রাধিকার দিয়েছে স্বাধীনতার জয়সূর্য যিনি এনে দিয়েছেন তাঁকে। স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচতে চায় ? কেউ বাঁচতে চায় না।

তাই স্বাধীনতা যিনি আনেন, তিনিই পান অগ্রাধিকার, তিনিই হন জাতির পিতা। যেমন ভারতের গান্ধিজী, সোভিয়েত ইউনিয়নের লেনিন, নব্য চীনের মাও সে তুং, ভিয়েতনামের হো চি মিন, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা এবং আমেরিকার আব্রাহাম লিংকন। ঠিক তেমন একজন মহামানব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা।
মার্চ মাস স্বাধীনতার মাস। এই মাসের তিনটি দিন, তিনটি তারিখ বাংলাদেশের ইতিহাসে এবং বাঙালি জাতির জীবনে ধ্রুবতারার মতো জ্বল জ্বল করে জ্বলছে, আলো ছড়াচ্ছে, পথ দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতি সেই আলোর পথ ধরে সামনের পানে এগিয়ে চলেছে। দিবস তিনটির একটি হচ্ছে ৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস, দ্বিতীয়টি ১৭ মার্চ, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। তৃতীয়টি ২৬ মার্চ, আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা দিবস।
ভাষা আন্দোলন পরবর্তীকালে, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যে স্বাধীনতা আন্দোলনের এক একটি ধাপ, এক একটি পর্যায় অর্থাৎ সেই ১৯৪৮ সাল হতে ১৯৭১ পর্যন্ত এই দীর্ঘ ২৩/২৪ বছরের সংগ্রামশীল অধ্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, অসীম সাহস ও মনোবল নিয়ে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সংগ্রাম করে গেছেন।

সংগ্রাম করতে করতেই তিনি হয়ে উঠেছেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানিয়ে ঊনসত্তরের ২৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ ছাত্র-জনতার সমাবেশে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
তাঁর ৫৪ বছরের জীবনে দীর্ঘ ১২/১৩টি বছরই তিনি জেলে কাটিয়েছেন। এ নিয়ে অবশ্য বঙ্গবন্ধুর কোনো দুঃখ আফসোস ছিল না।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্যা স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এ সময় একদিকে যেমন ঘর-সংসার, সন্তানদের সামলিয়েছেন, অন্যদিকে দলের প্রতি খেয়াল রেখেছেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সিদ্ধান্ত দিয়ে দলের কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে জেলখানায় বসে সময় নষ্ট না করে লেখালেখির কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। কাগজ কলম দিয়ে এসেছেন। কারাগারে বসে বঙ্গবন্ধু নিজ জীবনের কথা লিখে গেছেন।

পরবর্তীকালে এই লেখাগুলো সংগ্রহ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ নামক গ্রন্থ দুটি প্রকাশ করেন। গ্রন্থ দুটি বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল। বই দুটি পড়ে শেখ মুজিবকে যেমন জানা যায়, তেমনি জানা যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপাত্ত। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ যে অভিন্ন, একই সুতোয় গাঁথা গ্রন্থ দুটি তারই পরিচয় বহন করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্ম না হলে বোধ করি এত তাড়াতাড়ি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে আমরা পেতাম না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালি জাতির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন পূরণ করে জাতিকে তিনি উপহার দিয়েছেন মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ স্বাধীনতা।
১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শুভ জন্মদিনটি ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে থাকে। আমরা জানি, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যৎ, আগামী দিনে ওরাই দেশ এবং জাতির হাল ধরবে। বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে যারা সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলবে, তাদের নিজেদেরকেও একজন সফল সার্থক মানুষ হিসাবে গড়ে উঠতে হবে।

তার জন্য শিশুদের সামনে থাকা চাই এমন আদর্শ, যার মধ্য দিয়ে বিচ্ছুরিত হবে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, মানবিকতা, উদারতা, পরোপকারিতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমিকতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তেমনি একজন আদর্শিক মহাপুরুষ, যাঁর মধ্যে এসব গুণাবলির সমাবেশ ঘটেছে। তাই দেশ জাতি সমাজ গঠনে শিশুদেরকে প্রেরণা জোগাবে, পথ দেখাবে বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ।
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসাবে সরকারিভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন। দিবসটিকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিটি স্কুলে, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে, গণমাধ্যমে, আনন্দ অনুষ্ঠান, নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পালিত হয়ে আসছে।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের দেশের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও গবেষকরা প্রচুর কবিতা, গান, প্রবন্ধ রচনা করেছেন, ছবি এঁকেছেন। ফলে, শিশু-কিশোররা ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চেনার জানার সুযোগ পাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে জানা মানে দেশকে জানা, দেশের প্রকৃত ইতিহাস ও স্বাধীনতাকে জানা। সেই সাঙ্গে বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ও আদর্শকে বুকে ধারণ করে একজন দেশপ্রেমিক মানবতাবাদী মানুষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করা।
বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোরদের বড় ভালোবাসতেন। শিশুদের শিক্ষাদীক্ষা, দৈহিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নানা পরিকল্পনা, নানা কর্মসূচি তিনি হাতে নিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালের ২২ জুন তিনি জাতীয় শিশু আইন জারি করেন। এ আইনে শিশুদের নাম ও জাতীয়তার অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। শিশুর প্রতি অবহেলা শোষণ, বঞ্চনা নিষ্ঠুরতা, নির্যাতন, নিপীড়ন অথবা শিশুকে বিপজ্জনক পথে ঠেলে দেওয়া, অসামাজিক কাজে ব্যবহার করা এসব থেকে শিশুজীবনের নিরাপত্তার অধিকার এই আইনে নিশ্চিত করা হয়।

শিশুদের কল্যাণের জন্য মায়েদের সম্পৃক্ত করে মা ও শিশু কল্যাণ অধিদপ্তর খোলা ও শিশু একাডেমি গড়ে তোলা এসবই বঙ্গবন্ধুর ভাবনার ফসল। শেখ মুজিব শৈশবে-কৈশোরে নিজে যেমন দুর্দান্ত স্বাধীনতা ভোগ করেছেন, বাঁধনছেঁড়া আনন্দে দিন কাটিয়েছেন, তেমনই বাংলাদেশের শিশু-কিশোররা যাতে হেসে খেলে মুক্ত চিন্তায় মুক্তমনে বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও সুযোগ পায়, সে কথাও তিনি ভেবেছেন।
জীবদ্দশায় শিশুদের সম্পৃক্ত করে তিনি ভিন্ন মাত্রায় ভিন্ন আঙ্গিকে নিজের জন্মদিন পালনের চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জামাতা মরহুম ড. মুহম্মদ ওয়াজেদ মিয়া কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘রাসেল ছিল বঙ্গবন্ধুর কলিজার টুকরা। তিনি রাসেলকে এদেশের সমস্ত শিশুর মডেল হিসাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

তিনি জানতেন প্রতিটি শিশুই তার পিতা-মাতার কাছে বড় আদরের। এখানে কোন জাত-পাত, ধনী-গরীবের ভেদাভেদ নেই। বঙ্গবন্ধুর ভাবনা ছিল আমাদের নতুন স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশটাকে ভালো করে গড়তে হলে এই শিশুদের সঠিকভাবে গড়তে হবে। ওদের তাজা রক্তে দেশপ্রেম ঢুকাতে হবে। ওদের ভালোমত গড়তে পারলেই আমি সার্থক। রাষ্ট্রীয় নীতিমালা পরিবর্তন করে অথবা আইন করে যা করা যাবে না। এই শিশুরা বড় হলে দেশ ও দেশের মানুষের সবদিকের মুক্তির জন্য তাই করবে।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সবখানেই ফাইল-নথি আর লালফিতার দৌরাত্ম্য। কিছুই ঠিকমত করা যায় না।’ শিশুদের প্রতি কতখানি দরদ ও ভালোবাসা থাকলে একজন রাষ্ট্রপতি হয়ে এমন কথা বলতে পারেন তা সহজেই অনুমেয়।
রোকনুজ্জামান দাদাভাই যিনি শিশুদের নিয়ে সারাজীবন কাজ করেছেন তিনি বলেছেন, শিশুদের জন্য আয়োজিত প্রায় সকল অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে দেখা যেত। তিনি বলতেন, ‘শিশু হও, শিশুর মত হও। শিশুর মত হাসতে শেখো। দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে।’ আসলে বঙ্গবন্ধু ছিলেন শিশুর মতো সহজ সরল মানুষ। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, কুটিলতা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা এসব তিনি কম বুঝতেন।

রোকনুজ্জামান দাদাভাইয়ের লেখা থেকে আরও জানা যায়, ১৯৬৩ সালের শীতকালে ঢাকা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে ১০ দিনব্যাপী এক শিশুমেলার আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত শিশুমেলায় বঙ্গবন্ধু ছোট্ট সোনামণিদের সঙ্গে আনন্দে দিন কাটাচ্ছিলেন। তখনও তাঁর পেছনে গোয়েন্দা লাগানো ছিল। মজার বিষয় হলো, সেই আনন্দমেলায় প্রতিটি কার্যক্রমই ছোটদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

তাদের মধ্যে গোয়েন্দা ছিল, পুলিশও ছিল। এইসব ছোট গোয়েন্দার হাতে সরকারি সেই ঝানু গোয়েন্দাটি ধরা পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু খুশি হয়ে খুদে গোয়েন্দাদের পিঠ চাপরে বলেছিলেন, ‘শাবাশ, আর আমার ভয় নেই’।
১৯৭২ সালে ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু ৫ দিনের সরকারি সফরে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। সে সময় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের পরামর্শক্রমে দাদাভাই রোকনুজ্জামান খান মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, খানসেনা ও রাজাকারদের অত্যাচারের দৃশ্য নিয়ে ৫ থেকে ১২ বছরের ১৫/১৬জন শিশুর আঁকা ছবি প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভকে উপহারস্বরূপ দেওয়ার জন্য শিশুশিল্পীসহ গণভবন ‘সুগন্ধা’য় যান এবং বঙ্গবন্ধুর হাতে ছবিগুলো তুলে দেন।

শিশুদের আঁকা ছবি ও তার বিষয়বস্তু দেখে তিনি মুগ্ধ হন, শিল্পী শিশুদের কাছে ডেকে খুব আদর করেন। এবং এই মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সঙ্গে আসা দাদাভাইসহ ড. আবদুল্লাহ আলমুতী শরফুদ্দিন ও লুৎফুল হায়দার চৌধুরীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আজকের এই কর্মব্যস্ত দিনের মধ্যে এই একটুখানি সময়ের জন্য আমি শান্তি পেলাম। এই শিশুদের সান্নিধ্য আমার সব দুঃখ অবসাদকে ভুলিয়ে দিয়েছে।’

১৯৭৪ সালে গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে শিশুপার্কে আয়োজিত ‘শিশুমেলা’ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর শিশুরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার জন্য গণভবনে গেলে বঙ্গবন্ধু তাদের পরিবেশিত কুচকাওয়াজ ও খেলধুলা দেখে খুব আনন্দ ও তৃপ্তিলাভ করেন। সবার হাতে মিষ্টির প্যাকেট তুলে দিতে দিতে তাদের নাম শুনলেন। একটি শিশু তার নাম মুজিবুর রহমান বলায় বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে কোলে তুলে নিয়ে বললেন, ‘পেয়েছি, আমি আমার মিতাকে পেয়েছি’।
১৯৭৫ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেষবারের মতো শিশুদের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন। সেদিন শেরেবাংলা নগরের নতুন গণভবনে বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে বয়েজ স্কাউট, গার্লসগাইড, কচিকাঁচার মেলা ও খেলাঘর আসরের ৮০০ ছোট ছেলেমেয়ে উপস্থিত হয়েছিল। প্রতিটি সংগঠনের সদস্যরা নিজ নিজ ইউনিফর্ম পরেছিল।

সেদিনের সেই সবুজ চত্বরে বিভিন্ন রঙের সমারোহে মনোরম পরিবেশে বঙ্গবন্ধু প্রটোকলের সকল বেড়া ভেঙে শিশুদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। শিশুদের সঙ্গে এই মহামিলনের দৃশ্য বাঙালি জাতি আর কখনো দেখতে পায়নি, পাবেও না। এরপর আর কোনো শিশুর ভাগ্যে জোটেনি এমন সৌভাগ্যময় গর্বিত দিন। সব শেষ হয়ে গেল ঘাতকের বুলেটের আঘাতে।
বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় শিশুদের নিয়ে জন্মদিন পালন করার এক চমৎকার ইতিহাস রচনা করে গেছেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ে দেশে জাতীয় শিশুদিবস পালন বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেসরকারি ও দলীয় পর্যায়ে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালিত হতো। ২০০৯ থেকে জাতীয় শিশুদিবস পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। তাই যতদিন বঙ্গবন্ধু থাকবেন এই বাংলায়, ততদিন তাঁর জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ হিসাবে পালিত হবে।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শিশুরা হয়ে উঠবে এক একজন মুক্তি সেনা, মুজিব সেনা। ওরাই ধরবে বাংলার হাল, তুলবে পাল। তরতরিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ সামনের পানে। তাই আর নেই কোনো ভয়, হবেই হবে বাংলার জয়।

লেখক : অধ্যাপক, চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী

 

আরও পড়ুন