বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণেই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা

হীরেন পণ্ডিত

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দের সঙ্গে বাঙালি ১৯৬৯ সাল থেকেই পরিচিত, বঙ্গবন্ধুর তাৎপর্য ও বঙ্গবন্ধুর জীবনী উপস্থাপন করা হয় অনেকের কাছে শিশু ও কৈশোর কাল থেকেই। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের দলিলের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে আমরা অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে চিনি। তাদের চোখ দিয়ে দেখি। আমরা তাদের পরম শ্রদ্ধেয় শেখ সাহেবকে নতুনভাবে চিনি। একজন মুক্তিযোদ্ধা খুব সহজ ভাষায় বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতা বুঝিয়ে দেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব ছিল সূর্যের মতো উজ্জ্বল, যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত টিকে ছিল। যার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। সত্যবাদিতা, নিষ্ঠা, আপসহীন ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞা- সব গুণই ছিল তাঁর মধ্যে। যা থেকে আমাদের তরুণদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। বঙ্গবন্ধু তরুণদের অনুপ্রেরণার নাম। এই নাম তরুণদের সাহস যোগায়।

ছাত্রজীবন থেকেই অধিকার আন্দোলনের পুরোভাগে শেখ মুজিব ছিলেন পরিচিত মুখ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি সামনের সারিতে থেকে বেশ কিছু আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি বহুবার জেলে গেছেন, বাংলার মানুষ তাকে মুক্ত করেছে। যাঁর চোখে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে। তাঁর সংগ্রামী জীবন প্রতিটি প্রজন্মের কাছে উদাহরণ, তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপে একটি শিক্ষা রয়েছে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি এগিয়ে যাওয়ার সাহস ও অনুপ্রেরণা। তাদের মতে বঙ্গবন্ধু মানে স্বাধীন বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে সাম্প্রদায়িক হামলা ও ধর্মীয় উগ্রবাদের শিকার নির্যাতনের শিকার মানুষের ভয়াল মুখ যখন আমরা দেখি, এমন প্রেক্ষাপটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িক আদর্শ আমাদের মনে এসেছিল বিশ্বে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে পারস্পরিক সহাবস্থান, সহনশীলতার চর্চা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার। ১৯৪৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন থেকে শুরু করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের নীতি হিসেবে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করা পর্যন্ত তিনি সারাজীবন ধর্মনিরপেক্ষতার মহৎ আদর্শের চর্চা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বীরত্ব ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল প্রতীক সবার কাছে আদর্শনীয় হয়ে আছে। দেশকে পাকিস্তানের দাসত্ব থেকে মুক্ত করার স্বাধীনতার অপর নাম বঙ্গবন্ধু। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। তরুণ সমাজের অনুপ্রেরণার অপর নাম বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বর্তমান তরুণদের জন্য অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর সাহসিকতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সম্মোহনী উচ্চারণ, অসাধারণ নেতৃত্বগুণ ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। আকাশছোয়া জনপ্রিয়তার অধিকারী বঙ্গবন্ধুও বিশ্বাসঘাতকতার হাত থেকে রেহাই পাননি। দেশ ও জাতির শত্রু স্বার্থান্বেষী অপরাধীদের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নির্মমভাবে হত্যা করে ইতিহাসের এক লজ্জাজনক কালো অধ্যায় রচিত হয়।

বঙ্গবন্ধু মানে একটি নিখুঁত নাম। হিমালয়ের মতো মন, সমুদ্রের মতো হৃদয়, বীরত্ব ও সাহস- সবই বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব। তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু একজন নেতা ও আদর্শবাদী হিসেবে জনগণের অধিকার আদায় ও বাস্তবায়ন নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন, তাঁর অন্যায়, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছিল অবিস্মরণীয়। নির্ভীক ও সাহসী এই সৈনিককে কাবু করতে না পেরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, তার অভিব্যক্তি, মানুষের প্রতি তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, মানুষের সাথে তার সহজ মিশেল, তার সাহসিকতা তরুণ প্রজন্মকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম এ ভূখণ্ডের মানুষের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কয়েক শতাব্দী আগে গোপালগঞ্জের এক প্রত্যন্ত গ্রামে যে শিশুটি প্রথম চোখ খুলেছিল। যে শিশুটি রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার মাধ্যমে ধাপে ধাপে উপমহাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দিয়েছে তা অনেকের কাছেই বিস্ময়। শুধু উপমহাদেশের নয় সারা বিশ্বের শোষিত মানুষের পক্ষে তার অবস্থান ছিল দৃঢ়। বঙ্গবন্ধু এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার কোটি কোটি মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে মুক্তিযুদ্ধের দিকনির্দেশনা রয়েছে। এই ক্যারিশম্যাটিক নেতা আগেই বুঝেছিলেন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা ছাড়তে না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে জাতির মুক্তির যুদ্ধ আসন্ন এবং সে যুদ্ধে তিনি উপস্থিত নাও থাকতে পারেন। তাকে আবারও গ্রেফতার করা হতে পারে। মনে হয় সে কারণেই তিনি স্পষ্ট বলেছেন, ‘ আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোকজনকে হত্যা করা হয়, আমার অনুরোধ রইলো তোমাদের কাছে। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর সাথে লড়াই করতে হবে, আমি যদি হুকুম দিবার না পারি, তোমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেবে… জয় বাংলা’। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা জুগিয়েছিল। এটি এখনও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। এটি আগামী যুগে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। তাই নতুন প্রজন্মের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একজন ক্যারিশম্যাটিক নেতা মনে করাটাই স্বাভাবিক। কারণ একটি ভাষণে তিনি সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছিলেন। স্বপ্নের জাদুকর আর কে, কখন এমন ক্যারিশম্যাটিক নেতাকে প্রভাবিত করেছে, একীভূত করার জন্য একটি বক্তৃতায়?

বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলার এমনই এক অদম্য বীর এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বঙ্গবন্ধু একজন মহান মানুষ। এই মহামানবের মৃত্যু নেই। মহামানবরা তাঁরা কর্ম দ্বারা বেঁচে থাকে। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা চিরকাল বেঁচে থাকবে। যতদিন বাংলাদেশ নামক দেশটি পৃথিবীতে পরিচিত থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করা হবে।
বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালোবাসতেন। তাদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করতেন। সকল শিশুর জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে তিনি যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে সবার জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধা-দারিদ্র, উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার। তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে দেশ ইতোমধ্যে অনেক দূর এগিয়েছে। মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে উচ্চতায় নিয়ে যান; আজকের বাংলাদেশ সেই মজবুত ভিত্তিরই বহিঃপ্রকাশ।

অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে বঙ্গবন্ধু নিজেই পথ দেখিয়েছেন। তিনি আমাদের শক্তি ও সাহসের উৎস। তার দর্শন, মানবতা ও রাজনীতি দৃঢ় হচ্ছে। বর্তমানে, বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যার দ্বারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত দল দ্বারা বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে। একই সঙ্গে তিন মেয়াদের সরকার দেশকে উন্নয়নের উচ্চ শিখরে নিয়ে গেছে- তা বিশ্ববাসীর কাছে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই জাতির মুক্তি ও সমৃদ্ধি। বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগে বাঙালির পরিচয় ফুটে উঠেছে। তার সংগ্রাম সার্থক হয়েছে। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমাদের অর্জন কোনো দিক থেকেই কম নয়। তবে আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন; সেখানে আমাদের অবস্থান কতটা প্রত্যাশিত? সব শিশু কি এখনও শিক্ষার আওতায় আছে? কবে পথ পাবে লাখ লাখ পথশিশু?

হতাশার মাঝেও বঙ্গবন্ধু আশার আলো। তার জীবন ও কর্ম আমাদের সকল সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হতে পারে; এ কারণে সমাজের সর্বরে তার জীবনী প্রয়োজন। হাজারো নির্যাতন, শোষণ, জেল-জুলুম সহ্য করেও তিনি দেশের শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তির অবকাঠামো তৈরিতে ভুল করেননি। ১৯৭১ সালে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপিত হলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তথ্য ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার প্রেক্ষাপট রচিত হয়। তিনি খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদির মতো মৌলিক চাহিদা হিসাবে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারকেও স্থান দেন। দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নের সূচনা করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয় তখন বিশ্বে তৃতীয় শিল্প বিপ্লব চলছিল। বঙ্গবন্ধু দেখলেন, তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের সম্ভাবনা ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে যাচ্ছে। উপরন্তু, ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট আবিষ্কার এই বিপ্লবের গতি, প্রভাব এবং শক্তি বৃদ্ধি করে। জাপান, চীন এবং কোরিয়াসহ এশিয়ার কিছু দেশ তৃতীয় শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের ফলে সৃষ্ট সুযোগ কাজে লাগাতে শুরু করে।

রাজনৈতিক জীবনে এক যুগেরও অধিককাল বঙ্গবন্ধু কারাগারে কাটিয়েছেন। দুইবার তিনি ফাঁসির কাষ্ঠে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, ১৮ বার কারাবরণ করেছেন। পাকিস্তানি শাসক চক্রের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সকল আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য তৈরি করেছেন। ১৯৫২, ১৯৫৪, ১৯৬২, ১৯৬৬- এর আন্দোলন আর ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ১৯৭০-এর নির্বাচনে বিজয় সবই জাতির সংগ্রামী ইতিহাসের একেকটি মাইলফলক। আর এই সংগ্রামের নেতৃত্ব ও বলিষ্ঠ ভূমিকায় ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী ও আপোষহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। যেখানে তিনি ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এরপর নয় মাস রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। বাংলা-বাঙালি-বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ এক ও অবিচ্ছেদ্য অংশ।

দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক বঙ্গবন্ধু এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর একক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন স্থাপন করেন। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশ সহজে যোগাযোগ করতে পারছে। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য বহির্বিশ্বের সাথে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ বজায় রাখা অপরিহার্য, বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতার কারণে আজ আমরা যার সুফল ভোগ করছি। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির বহুবিধ ব্যবহার ও গুরুত্বকে অতিরঞ্জিত করা যাবে না। ইন্টারনেট পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তথ্য আদান-প্রদানের দ্রুততম উপায়।

অফিসের কাজ, ব্যবসা, লেনদেন, কৃষি, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে দ্রুত ও সহজ হয়ে উঠছে। আমরা এখন তথ্য প্রযুক্তির উপর এতটাই নির্ভরশীল যে তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া একদিনও চলতে পারি না। আমরা এখন যা বুঝি তা বঙ্গবন্ধু বহু বছর আগে উপলব্ধি করেছিলেন। শিক্ষাকে কোনো শ্রেণীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সর্বজনীন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টা ছিল চোখে পড়ার মতো। তিনি মনে করতেন যে শিক্ষা হওয়া উচিত অভিন্ন, গণমুখী এবং সর্বজনীন অর্থাৎ সকলের জন্য শিক্ষা। কেউ নিরক্ষর থাকবে না সবাই শিক্ষিত হবে। নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে এগিয়ে যাবে।

৫৫ বছরের জীবনকালে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অবদান চাইলেই তাই মুছে ফেলা সম্ভব নয়। এমনকি স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনেও রয়েছে তার ব্যাপক ভূমিকা। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার সাফল্যও তো কম নয়। এ সময়ে তার কোনো কোনো পদক্ষেপ নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করেছেন। সেসব সমালোচনাকে গ্রাহ্য ধরে নিলেও ‘বাংলাদেশ’ নামে বাঙালি জাতির জন্য স্বতন্ত্র একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারণেই যতদিন ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্র থাকবে, ঠিক ততদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে আরও যেসব মানুষের অবদান আছে, তা যত সামান্যই হোক- তাও কারোর পক্ষে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কেবল আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন না। সত্তরের নির্বাচনের আগেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন সব স্বাধীনতাকামী বাঙালির নেতা। সে কারণে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যারা লালন করেন, বঙ্গবন্ধু তাদেরও। তাঁকে, তাঁর অবদানকে খÐিত করাও ইতিহাস বিকৃতিরই শামিল।

লেখক: প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

আরও পড়ুন