জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মধন্য টুঙ্গিপাড়ার সব কিছু আজও অমলিন। ঘাতকের বুলেট তাঁকে সবার কাছ থেকে কেড়ে নিলেও তিনি বেঁচে আছেন সবার মণিকোঠায়। স্মৃতির চাদরে মোড়া সেই হিজলগাছটির ছায়াতলে থাকে লাখো মানুষের আনাগোনা, নেই শুধু ছোট্ট খোকা (বঙ্গবন্ধু)। গ্রাম, শহর বা বিদেশের হাজার স্মৃতির মধ্যে বঙ্গবন্ধুর শৈশব ও কৈশোরের অন্যতম স্মৃতিবিজড়িত তাঁর বাড়ির পাশের বাঘিয়ার খালপারের সেই হিজলগাছ। বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলা বা রাজনৈতিক জীবনের অনেক স্মৃতি বহন করে এই গাছটি। এখনো রয়ে গেছে সেই হিজলতলা ঘাটলা। যেখানে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন।
বঙ্গবন্ধুর বাড়ির একেবারেই পাশ ঘেঁষে প্রবাহিত খালটি। ছোট হলেও বেশ পরিপাটি করে রাখা হয়েছে খালের দুই পাশ। দুই পার সবুজে ভরা। ইটের তৈরি ব্লক দিয়ে বাঁধানো হয়েছে খালটির উভয় পার। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশের পারে শান বাঁধানো ঘাট করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে। হিজলগাছটি ঠিক যেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কথার সাক্ষী হয়ে আছে। ঠায় দাঁড়িয়ে আজও ডুকরে ডুকরে কাঁদে প্রিয় মানুষটির জন্য!
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার উদ্যোগে স্মৃতি ধরে রাখতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশের খালের পার ও হিজলগাছের চারপাশ বাঁধাই করা হয়েছে। প্রতিদিনই জাতির পিতার স্মৃতিবিজড়িত হিজলতলাসহ খালটি পরিদর্শনে আসে শত শত বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। সারা দিন বিভিন্ন বয়সের দর্শনার্থী দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে অনুভব করেন বঙ্গবন্ধুর স্পর্শ।
হিজলতলা দেখতে আসা দর্শনার্থী বরিশালের আগৈলঝাড়া গ্রামের কালু দে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে আমি দেখিনি, কিন্তু টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর অনেক স্মৃতি আছে। তাই এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, হিজলতলা, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্মৃতি ঘুরে ঘুরে দেখেছি।’
মাদারীপুর থেকে আসা গণেশ রায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষকে ভালোবাসতেন। এ কারণে তিনি প্রকৃতিকেও ভালোবাসতেন। প্রকৃতির এসব গাছপালাকে ঘিরে তাঁর বেড়ে ওঠা। তাঁর এই স্মৃতিকে দেখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’
বঙ্গবন্ধুর বাড়ির পাশের এক প্রতিবেশী শেখ লুত্ফর রহমান (৭০) বলেন, ‘খালের ঘাটে স্বচ্ছ পানিতে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন, খালে সাঁতার কাটতেন, হিজলতলায় অবসর সময় কাটাতেন। বিভিন্ন কাজের জন্য এখান থেকেই বঙ্গবন্ধু নৌকায় বের হতেন। সেই থেকে হিজলগাছটি আজও বঙ্গবন্ধুর নানা স্মৃতিকথার সাক্ষী হয়ে আছে।’
টুঙ্গিপাড়ার পৌর মেয়র শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বাধীনচেতা। এলাকার সমবয়সীদের নিয়ে তিনি এই হিজলগাছের নিচে গল্প করতেন। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খালে বঙ্গবন্ধু গোসল করতেন। রাজনৈতিক সময়ে যখন বাড়িতে আসতেন এই হিজলতলায় বসে এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন।’
প্রসূন মন্ডল, গোপালগঞ্জ
দৈনিক জনকন্ঠ, ২৬ আগস্ট লিংক