১৯৭৫ সালে নৃশংসভাবে খুন হওয়ার ৪১তম বার্ষিকীতে ১৯৭২ সালে প্রধান কাণ্ডারি হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে বঙ্গবন্ধু কীভাবে সুষ্ঠুভাবে পুনর্গঠন করেছিলেন, তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভূমিকা স্মরণ করব। এটি স্মরণ করব এজন্য যে, আমাদের অনেকেই তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান এবং গণতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠান তৈরিতে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা ভুলে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পান ১৯৭২ সালের প্রথম সপ্তাহে এবং অবশেষে অনবদ্য সংবর্ধনার মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন দেশের রাজধানী ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন একই বছরের ১০ জানুয়ারি। পথে তিনি যাত্রা বিরতি দেন লন্ডন ও নয়াদিল্লি।
একজন সম্মোহনী নেতা এবং জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু ব্যাপক ত্যাগ স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য, নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে নতুন দেশ নিয়ে তাঁর ভিশনের কথা বলেছেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি। বাংলাদেশকে মুক্ত করাকে তিনি সেদিন বর্ণনা করেন ‘বন্দিদশা থেকে স্বাধীনতা, নিরাশা থেকে আশার’ যাত্রা হিসেবে। সেদিন আরো বলেন, তিনি স্বাধীন দেশে ফিরছেন হূদয়ে কারো প্রতি কোনো ঘৃণা নিয়ে নয়। বরং তিনি ফিরছেন পরম সন্তুষ্টি নিয়ে যে, অবশেষে মিথ্যার বিপরীতে সত্য, উন্মত্ততার বিপরীতে সুবিবেচনা, কাপুরুষতার বিপরীতে সাহস, অন্যায়ের বিপরীতে ন্যায় এবং মন্দের বিপরীতে ভালোর জয় হয়েছে।
একজন রাষ্ট্রনায়ক, অবিশ্বাস্য বাগ্মী বঙ্গবন্ধু খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগে বিপুলভাবে অভিভূত হয়েছিলেন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১০ জানুয়ারি দেয়া ভাষণে তিনি খুব দক্ষতার সঙ্গে বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপের কথা বলেন এবং বাংলাদেশের বিজয়ী জনগণের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। প্রথম সুযোগেই তিনি কাউকে অবাঙালিদের ওপর হাত না তুলতে সতর্ক করেন। একই সঙ্গে পাকিস্তানে আটকা পড়া চার লাখ বাঙালির নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সাধারণ পাকিস্তানিদের প্রতি তাঁর কোনো বিদ্বেষ নেই, এটা যেমন নিশ্চিত করেছেন, তেমনি পরিষ্কার করে বলেছেন, অন্যায়ভাবে বাঙালিদের যারা হত্যা করেছে, তাদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
একই ভাষণের গুরুত্বপূর্ণ এক বিবৃতিতে মুসলিম বিশ্বের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, কেবল ইন্দোনেশিয়ার পরেই বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র (বাংলাদেশে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস বিপন্ন— পাকিস্তানিদের এমন প্রচারণার জবাবে তিনি এটা বলেছেন)। তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, ‘ইসলামের নামে এ দেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুসলমানদের মেরেছে, অসম্মান করেছে নারীদের। আমি ইসলামকে অসম্মান করতে দিতে চাই না।’ তিনি তদন্তের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশে চালানো গণহত্যার পরিসর নির্ধারণের আহ্বানও জানান জাতিসংঘকে।
উল্লিখিত মতামতগুলো আন্তঃসম্পর্কিত এবং সেসবে কেবল যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারই প্রকাশ পায়নি; উপরন্তু প্রকাশ পেয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান কর্তৃক ইসলামের অপব্যবহারের বিষয়টিও। এই একই দৃষ্টিভঙ্গিই তাকে পরিচালিত করেছিল ১৯৭২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ওআইসির ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে। তখনকার ওআইসির মহাসচিব টেঙ্কু আবদুর রহমানকে তিনি বলেছিলেন, দ্বিতীয় মুসলিম দেশ হওয়া সত্ত্বেও (১৯৭১ সালে) নয় মাসে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঠাণ্ডা মাথায় নিরাপরাধ মুসলিম ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষকে খুন করলে তার বিরুদ্ধে ওআইসি কোনো প্রতিবাদ করেনি। ওআইসি মহাসচিব এর পাল্টা জবাব হিসেবে পরে বাংলাদেশে বসবাসরত বিহারি ও অন্য অবাঙালি মুসলিমদের প্রতি বাঙালিদের আচরণে ক্ষুব্ধভাবে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন।
পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী কর্তৃক সংঘটিত অপরাধের তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ১৭ এপ্রিল গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জেনেভা কনভেনশনের ৩নং ধারা লঙ্ঘন, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি মানবতাবিরোধী অপরাধে ১৯৫ জনকে বিচারের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এসব ব্যক্তি ও অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে জড়িত অন্য সহযোগীদের বিচার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিচারিক রীতি অনুযায়ী সম্পন্ন করা হবে। এ যুক্তি এবং সংশ্লিষ্ট বিচারিক প্রক্রিয়া ১৯৭৫ সালের নৃশংস আগস্ট হত্যাকাণ্ডের আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল। দুর্ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু পুরো বিচারিক প্রক্রিয়াকে লক্ষ্যচ্যুত করে। তবে এখন সৌভাগ্য যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর হয়েছে এবং এখন সেটি প্রায় শেষ হতে চলেছে। আমরা এজন্য আজীবন ঋণী থাকব লাখ লাখ মানুষের কাছে, যারা নিজেদের পরিবার হারিয়েছে এবং ১০ হাজার নারী, যারা নিগ্রহের শিকার হয়েছিলেন।
পরবর্তীতে দৃঢ় অবস্থান সত্ত্বেও ১৯৭৩ সালের মিসর-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু ইসলাম, আরব দেশ এবং ওআইসিকে সমর্থনে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠতা দেখাতে দ্বিধা করেননি। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তখন মিসর ও সিরিয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিত্সক দল ও চায়ের কার্টুন পাঠানো হয়েছিল। ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র কর্তৃক এটা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে লাহোরে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সদস্য হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়।
১৯৭৫ সালের পর অনেক নিন্দুকই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়েছে বলে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করেছে। এটা আসলে সত্য থেকে অনেক দূরে।
১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি (বঙ্গবন্ধুর ঢাকা প্রত্যাবর্তনের আগের দিন) নয়াদিল্লিতে দেয়া যৌথ বিবৃতি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদের পরবর্তী সফরে তিনি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে এ ব্যাপারেও তিনি জোর দেন যে, বাংলাদেশ সরকার যখনই ইচ্ছা পোষণ করবে তখনই যেন এ দেশের ভূখণ্ড থেকে মুক্তিযুদ্ধের কাজে মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা চলে যায়। এ প্রতিজ্ঞা পরবর্তীতে কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। ঢাকা ফিরে বঙ্গবন্ধু সহযোগিতার জন্য ভারতকে প্রকাশ্যে ধন্যবাদ জানান এবং তার পর বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। এটা তাত্ক্ষণিকভাবে পরিপালিত হয় এবং এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ভারতের উপনিবেশ হতে যাচ্ছে— পাকিস্তানি নেতৃত্বের এমন অপপ্রচারেরও অবসান হয়।
বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের অন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হলো, বিধ্বস্ত দেশের যুদ্ধাক্রান্ত নাগরিক এবং ভারতের সীমান্তে আশ্রয় চাওয়া ১০ মিলিয়নের অধিক শরণার্থীর মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা। ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতায় বলেছেন যে, ছয় সপ্তাহের স্বল্পসময়ে সাত মিলিয়নের অধিক শরণার্থীকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে। যথারীতি সেটা করা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক হাজার হাজার নির্যাতনের শিকার হওয়া মানুষগুলো সেখান থেকে দেশে ফিরে এসেছে। তাদের নতুন জীবন শুরু হয়েছে। এ রকম বিপুল জনসংখ্যার ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিঃসন্দেহে দুঃসাহসিক কাজ। তবে জাতিসংঘের সহযোগিতায় এ দুঃসাহসিক কাজই দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল।
সব জাতির সার্বভৌম সাম্যে গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন বঙ্গবন্ধু। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইন্ডিয়া ডেস্কের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমি সাম্য ও পারস্পরিক সুফলের ভিত্তিতে উন্নয়ন ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বৃদ্ধিতে তাঁর অব্যাহত চাপের বিষয়টি প্রত্যক্ষভাবে দেখেছি। তিনি বিশ্বাস করতেন পারস্পরিক সহযোগিতায়। তিনি জোর দিতেন এ অঞ্চলের মানুষের উপকার সাধনে উন্নয়ন ও সম্পদের সদ্ব্যবহারের ওপর। এ অ্যাপ্রোচই তাকে অবশেষে পরিচালিত করেছিল বিশেষজ্ঞদের নিয়ে স্থায়ীভাবে একটি যৌথ নদী কমিশন গঠনে ভারতকে রাজি করাতে। এর উদ্দেশ্য ছিল— দুই দেশের অভিন্ন নদী সম্পর্কে একটি ব্যাপকভিত্তিক জরিপ করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে উভয় দেশের কল্যাণে প্রকল্প তৈরি করা। ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণায়ও আন্তঃদেশীয় পাওয়ার গ্রিড সংযোগের সমীক্ষা করার কথা বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন এখনো অর্জন হয়নি। আজকে ৪৪ বছর পর আমাদের আঞ্চলিক জ্বালানি গ্রিড ও দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয় ডিনামিকস আবর্তিত হচ্ছে। এ রকম প্রক্রিয়া অনেক বছর আগে বঙ্গবন্ধুর ভিশনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
সুনির্দিষ্টভাবে পররাষ্ট্রনীতিতে বঙ্গবন্ধুর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কেবল বাংলাদেশের প্রতি অন্য দেশের স্বীকৃতি আদায় ও কূটনৈতিক সম্পর্ক তৈরি নয়, উপরন্তু বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোয় সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে উত্সাহিত করতেন। তাঁর নিজের বিদেশ সফর বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিদেশ সফরের প্রতিটি সুযোগে নির্দেশনা থাকত বাংলাদেশ যেন প্রত্যেকের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বমূলক ও ভালো প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক রাখে। তিনি জোটনিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, পারস্পরিক সহযোগিতা, কারো অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা এবং ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধার মতো মৌলিক নীতির ওপর বেশি জোর দিতেন।
বঙ্গবন্ধুর এ দৃঢ় প্রচেষ্টাই আমাদের দ্রুতই আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ আমরা যখন স্বাধীনতার প্রথম বার্ষিকী উদযাপন করছি, তখন দেখা গেল এরই মধ্যে ৫৪টি দেশ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। ১৯৭২ সালের শেষের দিকে এ সংখ্যা দ্রুত বাড়তে লাগল। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নেয়া ইতিবাচক উদ্যোগের ফলে। এক্ষেত্রে অবশ্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে ভারতকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহারে রাজি করানোর বিষয়টিও কাজ করেছে। এর পর অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ জোটনিরপেক্ষ গ্রুপ, কমনওয়েলথ, আইএলও ও ডব্লিউএইচওর সদস্য হয়েছে এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র না হয়েও বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্য তত্কালীন মহাসচিব কুর্ট ওয়েলদেইমের কাছে মানবিক সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ২৭ নভেম্বর ওয়েলদেইমের কাছে পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্যাম্পে বন্দি বাংলাদেশের নিরপরাধ মানুষকে পুনর্বাসনে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছিলেন। তিনি এটা করেছেন এজন্য যে, পাকিস্তানিরা বিষয়টিকে রাজনীতিকীকরণ এবং বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর হাতে আত্মসমপর্ণ করা পাকিস্তানি বাহিনীর মুক্তির বিষয়টি যুক্ত করতে চেয়েছিল। তাঁর দিক থেকে এ উদ্বেগ দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ।
বাঙালির মূলনীতি, প্রথা-রীতি ও জাতীয়তাবাদসহ বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যিক ঐতিহ্যের প্রতিও তিনি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। সোনার বাংলায় বাঙালি হিসেবে বাস করা ছিল তাঁর গর্বের বিষয়। তিনি ছিলেন দেশের জন্য জীবন উত্সর্গকারী। আমরা চিরঋণী থেকে তাঁর স্মৃতি জাগরূক রাখার চেষ্টা করব এবং একই সঙ্গে আমাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে তাঁর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়ার চেষ্টা করব, যেখানে সব নাগরিকের জন্য সমসুযোগ ও আইনের শাসন নিশ্চিত হবে।
লেখক: শোকাবহ আগস্ট
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার