যেভাবে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি কার? দেশের যে কোনো শিক্ষিত, রাজনীতিসচেতন ব্যক্তি, ঢাকার যে কোনো ট্যাক্সিক্যাব অথবা আশপাশ এলাকার রিকশাচালককে প্রশ্ন করলে খেদোক্তির স্বরে উত্তর দেবে- কেন শেখ সাহেবের! পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত পর্যন্ত কত লাখো কোটি পাহাড়-পর্বতই তো বুকটান করে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সর্বোচ্চ চূড়া হয়ে কেবল দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়ের এভারেস্ট।

বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বে শেখ পদবি নিয়ে তেমনি অনেকে আছেন ঠিকই; কিন্তু শেখ সাহেব বলতে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় কৃতজ্ঞ বাঙালির মাথা যার প্রতি নত করে, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাঙালিদের অধিকারের দাবি তোলায় কারাগার হয়েছিল তার স্থায়ী ঠিকানা। ফলে পারিবারিক জীবনে বিপর্যস্ত বেগম মুজিব ছেলেমেয়ে নিয়ে শ্বশুরের হাত ধরে ১৯৬১ সালের প্রথম দিকে ৩২ নম্বর রোড ধানমণ্ডির অসমাপ্ত, নির্মাণাধীন ৬৭৭ নম্বর বাড়িতে এসে ওঠেন। শেখ সাহেব সেই আইয়ুবের সামরিক শাসন শুরু হওয়া থেকে কারাগারে। হাইকোর্টের নির্দেশে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর তিনি মুক্তি পেয়ে সর্বপ্রথম এই বাড়িতে ওঠেন। কিছুদিন পর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার জন্য আইয়ুব সরকার আবারও তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। ১৯৬৩ সালে সামরিক শাসন প্রত্যাহার হলে আবারও তিনি মুক্তি পান এবং তখন থেকে এই বাড়ি আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় পার্টি অফিস হয়ে যায়। ১৯৬৪-এর মাঝামাঝি সময় থেকে শেখ সাহেব অধিকাংশ সময় কারাগারে ছিলেন। কিন্তু জনতার মিছিল ৩২ নম্বর রোডে উপস্থিত হয়ে সর্বদা স্লোগান তুলত ‘জেলের তালা ভাঙবো, শেখ মুজিবকে আনবো।’ তারা ঠিকই মুজিবকে মুক্ত করেছিল। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা পেশের পর গ্রেফতার এবং ’৬৮ সালে আগরতলা মামলা রুজু হলে কারাবন্দি মুজিবের ধানমণ্ডির এই বাড়ি বাঙালি জাতির আশা-আকাক্সক্ষার ঠিকানা হয়ে যায়। ১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক এক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ সাহেবকে মুক্ত ও বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। এরপর থেকে ’৭০-এর নির্বাচন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, জকিগঞ্জ-গোয়াইনঘাট থেকে শ্যামনগর-কলাপাড়া পর্যন্ত চষে বেড়ান। বাঙালিদের তিনি ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত করেন। তাদের জাতিসত্তাবোধ ও আত্মপরিচয় বাতলে দেন। তাদের ভেতর সাহস সঞ্চারিত করেন। এরই চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার ডাক দিলে বাঙালিরা সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের হিংস্রতা নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান তুলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করে। এই যুদ্ধে যে কেবল পাকিস্তানের লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছে তা নয়, তাদের সহযোগী মার্কিনবলয়, চীনসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশের হার হয়। ফলে তখন থেকেই প্রতিশোধের লক্ষ্য নিয়ে তারা বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে।

১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু বীরের বেশে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতেই ওঠেন। কোনো অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধান ছাড়া অতি সাধারণ মানের নির্মিত এটি একটি দোতলা বাড়ি। নিচে ছোট-বড় সব মিলিয়ে পাঁচটি এবং উপরে ড্রইং, ডাইনিংসহ পাঁচটি কক্ষ। সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেয়ার পর নিচতলার পুরোটাই রিসিপশন, প্রটোকল-প্রটেকশন ও দেশি-বিদেশি অতিথিদের সাক্ষাৎ কিংবা দলীয় মিটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। দোতলায় পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতেন বঙ্গবন্ধু। বাড়ির পেছনে উত্তর দিকে মূল ভবন থেকে আলাদা বেগম মুজিবের ছোট্ট রান্নাঘর। একই লাইনে মুরগি ও কবুতরের খোপ এবং পাশে গোয়ালঘর। যাকে বলা চলে ঢাকার বুকে শৌখিন একটি খাঁটি বাঙালি পরিবার। স্বাধীনতার পর বড় ছেলে শেখ কামালের জন্য তিনতলায় দুটি নতুন কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছিল।

সরকারপ্রধানের এই বাড়ির সম্মুখের দেয়ালের পর রাস্তা পার হলেই ধানমণ্ডি লেক। লেকের ওপার থেকে শত্রুর যে কোনো ভারি অস্ত্র এই বাড়ির নিরাপত্তা লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারে। এই বাড়ির দুই পাশে এবং পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ অট্টালিকাগুলো এই বাড়ির ওপর কর্তৃত্ব করছে। ওইসব বাড়ির জানালা কিংবা ছাদ থেকে সরকারপ্রধানের বাড়ি লক্ষ্য করে ক্ষুদ্রাস্ত্রের ফায়ার কিংবা গ্রেনেড ছুড়ে মারলে ফলাফল হবে মারাত্মক। দীর্ঘ সংগ্রাম-লড়াই করে যে মানুষটি বিশ্বের মুরব্বিদের চ্যালেঞ্জ দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন, দুর্ভাগ্য যে তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল খুবই নাজুক। রাষ্ট্রপতির বাড়িতে প্রবেশাধিকারের ওপর যে নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত এখানে তা ছিল না। কেননা তিনি ছিলেন কারও কাছে মুজিবর, কারও কাছে মুজিব ভাই, মুজিব কাকু, বাকি সবার বঙ্গবন্ধু-জাতির পিতা। তার সরকারি অফিস গণভবন ও বাসভবনে ছিল সব মিলিয়ে তিন শিফটের জন্য দু’শর কম পুলিশ-সেনাবাহিনীর সদস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ এবং যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী যতই পারদর্শী হোক না কেন, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) হ্যান্ডল করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। এর জন্য বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের নিরাপত্তার অংশ হিসেবে চারদিকে সাতটি সেন্ট্রি পোস্ট তৈরি করা হয়েছিল। এর চারটিতে সেনাবাহিনী এবং তিনটিতে সর্বদা পুলিশ প্রহরী দায়িত্বে ছিলেন। সেনাবাহিনী থেকে বাসভবনের জন্য মাত্র ২৫ জন সেনাসদস্য নিয়োগ দেয়া হয়। বাসভবন চত্বরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ৩১ নম্বর রোডে অন্য একটি বাড়িতে এই সৈন্যদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। ওখান থেকে প্রতি শিফটে একজন দলনেতার নেতৃত্বে ৭-৮ জন সৈনিক এসে দায়িত্ব পালন করতেন। ব্যাটারি কমান্ডার তাৎক্ষণিক ক্যাপ্টেন আ. বাসার আজিমপুরে অবস্থান করতেন বিধায় বিকাল থেকে এদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুলিশের একজন ডিএসপি পদের পুলিশ অফিসার নিচতলায় অবস্থান করতেন। রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্ব ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তার দায়িত্বে যেসব সেনা ও পুলিশ সদস্য নিয়োজিত ছিলেন তাদের কোনো ভেরিফিকেশন হয়েছিল কিনা সন্দেহ রয়েছে। সেনাবাহিনীতে চাকরিরত, অবসরপ্রাপ্ত/চাকরিচ্যুত বেশকিছু সদস্যের সরকারবিরোধী কার্যকলাপের তথ্য ইতিমধ্যে গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের কাছে ছিল। এরা প্রকাশ্যে অথবা গোপনে সরকার উৎখাতের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। মেজর ফারুক, তার ভায়রা ভাই মেজর রশীদ, মেজর ডালিম, মেজর নূর, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা এদের অন্যতম। এমনকি সেনাবাহিনীর তৎকালীন উপপ্রধান এদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তারপরও বিস্ময়ের ব্যাপার ৩১ জুলাই ’৭৫ পর্যন্ত সেই মেজর ফারুক, মেজর মহিউদ্দিন, ল্যান্সারের-১ বেঙ্গল ল্যান্সার ইউনিটকে গণভবন ও বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের নিরাপত্তায় রাখা হয়েছিল। ফলে ওই সময়ে গার্ডদের ডিউটি পরিদর্শনের অজুহাতে উপরোক্ত অফিসার ও সহযোগীরা রাষ্ট্রপতির বাসভবনের সম্পূর্ণ চিত্র পেয়ে যায়।

১৯৭৫ সালের ১ আগস্ট কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে আগত ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটের একটি ব্যাটারি/কোম্পানি ১ বেঙ্গল ল্যান্সারের কাছ থেকে গণভবন ও রাষ্ট্রপতির বাসভবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করে। অথচ, মাত্র কয়েক মাস আগে এই ইউনিটের অন্যতম অফিসার মেজর ডালিমকে সরকার ও শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়। চাকরি হারানোর পরও এই অফিসার বিভিন্ন সেনানিবাসে এমনকি ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি ইউনিটে নিয়মিত যাতায়াত অব্যাহত রাখে। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে পরিষ্কার হয়ে যায়, রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা তৎপর না থাকলেও মেজর ডালিম ও অন্য ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের মিশন নিয়ে ঠিকই তৎপর ছিল। ’৭৫-এর জানুয়ারি থেকে মূলত ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের জাল বিস্তার শুরু করে। এই সময়ে সেনাবাহিনীর ভেতরে পাকিস্তান প্রত্যাগত বনাম মুক্তিযোদ্ধা, সেনাপ্রধান বনাম উপপ্রধানের অনুসারী, রক্ষীবাহিনী গঠন নিয়ে মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে কোনো কোনো ইউনিটে সরকারবিরোধী ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে দেয়া হয়। মোটিভেটেড এসব সেনাসদস্য ষড়যন্ত্রের ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুরতার পথে হাঁটতে শুরু করে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা পাকিস্তান-মার্কিনিদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশি প্রভুদের পরামর্শে এরা মোশতাক-তাহের ঠাকুর-মাহবুব চাষীদেরও এক ছাতার নিচে জড়ো করে। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিনটিকে আঘাতহানার উত্তম দিন হিসেবে তারা বেছে নেয়। তাদের যথার্থ ধারণা ছিল, নিজ দেশের স্বাধীনতা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ভারতের গোয়েন্দাদের নজর নিজ দেশের দিকেই নিবিষ্ট থাকবে।

১৪ আগস্ট ’৭৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এরূপ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানসূচি ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ করার জন্য ঢাকার অধিকাংশ গোয়েন্দা মাঠকর্মীকে ওই এলাকায় পাঠানো হয়। একইদিন দুপুরে একটি ভারতীয় হেলিকপ্টার, যেটি পার্বত্য চট্টগ্রামে অবস্থানরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাজে নিয়োজিত ছিল, সেটি ফেনী এলাকায় বিধ্বস্ত এবং এর সব যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হয়। তাদের মৃতদেহ ঢাকায় নিয়ে আসা ও আনুষঙ্গিক কার্যাদি নিয়ে সেনাপ্রধান, সিজিএস, ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড কমান্ডার, ডিজিএফআই প্রধানসহ সেনাবাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা কর্মকর্তা ও মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দারা গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। অতঃপর ক্লান্ত দেহে বাসায় ফিরে ঘুমিয়ে যান তারা।

কিন্তু পরদিনের সূর্যোদয়ের আগে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনা জাতির ইতিহাসে ঘটেছিল, তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, ধূর্ত ষড়যন্ত্রকারীরা পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ও হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করার মতো ঘটনা ঘটিয়ে গোয়েন্দাদের নজর ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিল। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের ব্যস্ত রেখেছিল যেন তাদের মূল অভিযান পরিচালনার আগ পর্যন্ত গোপনীতা বজায় থাকে। তাদের সেই পরিকল্পনা সফল হয়েছিল।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তখন মাসের ১ম ও ৩য় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নাইট ট্রেনিং করা হতো। অধিকাংশ সৈনিকের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানদানের জন্য অস্ত্র বের করা হলেও নাইট ফায়ারিং না থাকলে নাইট ট্রেনিংয়ের জন্য গোলাবারুদ বের করা হতো না। ট্যাংক/গাড়ি স্টার্ট, মেইন্টেন্যান্স ছিল চালকদের কাজ। কিন্তু ’৭৫-এর ১৪ আগস্ট, ঢাকা সেনানিবাসের মেজর ফারুকের ১ বেঙ্গল ল্যান্সার এবং তার নিকটাত্মীয় মেজর রশীদের ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি সেনাবাহিনীর স্থায়ী আদেশ অমান্য করে নিজ নিজ ইউনিটের নাইট ট্রেনিং শুরু করে রাত ৯টার পর। সাধারণত অধিনায়কসহ সব অফিসারই ট্রেনিং গ্রাউন্ডে থাকার কথা থাকলেও এক অথবা দু’জন অফিসার ব্যতীত ওই রাতে দুই ইউনিটেরই অধিকাংশ অফিসার তাদের অধিনায়কের অফিসে গোপন শলাপরামর্শে ব্যস্ত থাকে। তাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি তাদের অফিসারের দায়িত্বে সীমিতসংখ্যক আর্টিলারির গোলাবারুদ গোপনে বের করলেও সৈনিকদের অস্ত্রের গোলাবারুদ দেয়া হয়নি। রাত ১টার সময় ট্রেনিং শেষ হলেও আধাঘণ্টার বিশ্রাম দিয়ে আবারও জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ইতিপূর্বে উভয় ইউনিটের কেউ যেন অনুমতি ব্যতীত বাইরে যেতে বা প্রবেশ করতে না পারে তা নজরে রাখার জন্য অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

রাত ১টা ৩০ মিনিটে আর্টিলারি ইউনিটের সৈনিকদের আবারও জড়ো করে সবাই উপস্থিত আছে কিনা নিশ্চিত করা হয়। এরপর যৌথভাবে ট্রেনিংয়ের নামে তাদের ৩ টন লড়িতে ওঠার নির্দেশ এবং ১ বেঙ্গল ল্যান্সার ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। রাত ৩টার কিছু পর উভয় ইউনিটের সৈনিকদের একত্রিত করা হলে মেজর ফারুক, মেজর রশীদ, চাকরিচ্যুত মেজর ডালিম ও মেজর নূর যুদ্ধ পোশাকে সজ্জিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার এবং তার সরকার উৎখাতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। উপরোক্ত অফিসারদের বক্তব্য শেষে ১ বেঙ্গল ল্যান্সারের পক্ষ থেকে সৈনিকদের মাঝে গোলাবারুদ বণ্টন করা হয়।

চাকরিরত ও চাকরিচ্যুত সব মিলিয়ে বারজন অফিসারকে বিভিন্ন টার্গেটের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। মেজর ফারুক, মেজর রশীদ এবং মেজর ডালিম ভিন্ন ভিন্নভাবে টার্গেটগুলোর তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নেয়। রাত আনুমানিক ৪টার সময়ে বেশকিছু জিপ ও লরির একাধিক কনভয় সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর ট্যাংকও তাদের অনুসরণ করে। যাত্রার আগে এমনভাবে কনভয়ের অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছিল, সব টার্গেটে যেন প্রায় একই সময়ে আঘাত হানা যায়। সেই মোতাবেক কনভয়ের প্রথম ভাগে মেজর ডালিমের নেতৃত্বে একটি জিপ ও এক ট্রাক সৈন্য মহাখালী-মগবাজার হয়ে দ্রুততম সময়ে মিন্টো রোডে মন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সরকারি বাসভবনে পৌঁছে এবং কর্তব্যরত দুর্বল পুলিশি প্রহরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলে। মেজর রাশেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আরেকটি দল ফার্মগেট-হোটেল ইন্টারকন হয়ে একই টার্গেটে ২৯ মিন্টো রোডে উপস্থিত হয়ে সেরনিয়াবাতের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলির শব্দে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙে যায়। আবদুর রব সেরনিয়াবাত কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতিকে ফোন করেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ফোনালাপ শেষ হওয়ার আগেই মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মোস্তফা ও তাদের দল গুলি ছুড়তে ছুড়তে দরজা ভেঙে ঝড়ের বেগে দোতলায় উঠে যায়। মন্ত্রী ও তার পরিবার এবং ক’জন অতিথিকে টেনেহিঁচড়ে নিচে নিয়ে আসে। এরপর লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে সাব-মেশিন কারবাইনের (এসএমসি) ট্রিগার চেপে ধরে। গুলির শব্দ এবং মানুষের চিৎকার ও আর্তনাদ যেন আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের আরশ পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। চার বছরের শিশু সুকান্ত বাবুর মতো নিষ্পাপ শিশুও এই ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।

মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের অপর গ্রুপ প্রায় একই সময় ধানমণ্ডিতে যুবনেতা শেখ মনির বাসায় হানা দেয়। বিনা বাধায় বাড়ির দোতলায় উঠে এই গ্রুপটি শেখ মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গুলি করে হত্যার পর ভাবলেশহীনভাবে বেরিয়ে ৩২ নম্বর রোড ধানমণ্ডির দিকে চলে যায়। খুনিরা সবাই মুসলিম এবং শান্তির ধর্ম ইসলামে বিশ্বাসী ছিল।

তৃতীয় দলটির টার্গেট ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডের ৬৭৭ নম্বর বাড়ি, যেখানে সপরিবারে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা শেখ মুজিব। যেহেতু এই টার্গেটে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্য পাহারা রয়েছে তাই কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভিন্নভাবে ঘায়েল করতে হবে। পরিকল্পনানুযায়ী আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অংশ লেকের অপর পাড়ে মর্টার ও ভারি মেশিনগান নিয়ে, মেজর মহিউদ্দিন ল্যান্সার গ্রুপ ৩২ নম্বর রোড ধানমণ্ডির পশ্চিম প্রান্তে, মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু ৩২ নম্বর রোডের প্রবেশমুখে মিরপুর রোডে অবস্থান গ্রহণ করে। আরেকটি দলকে রাখা হয়েছে ৩১ নম্বর রোডে যেন কেউ পেছন দিকে দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে। মেজর ফারুক ফার্মগেটে ট্যাংক নিয়ে ওয়্যারলেস সেটের মাধ্যমে তত্ত্বাবধান করছিল। বেশ কয়েকটি ট্যাংক রেডিওস্টেশন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। ফজরের আজান কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই বঙ্গবন্ধু তার ভগ্নিপতি আ. রব সেরনিয়াবাতের টেলিফোন পেয়ে বিচলিত হয়ে দোতলা থেকে তার পিএ মুহিতুল আলমকে দ্রুত পুলিশ কন্ট্রোলরুমে লাইন মেলাতে বলেন। মুহিতুল যখন লাইন লাগাতে ব্যস্ত, এমন সময়ে গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরিহিত বিচলিত বঙ্গবন্ধু দ্রুত পায়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। তখন চারদিকে আলো-অন্ধকারের খেলা। বাড়ির চত্বরে সেনাবাহিনীর গার্ডরা বিউগল বাজিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছে। বঙ্গবন্ধু অধৈর্য হয়ে মুহিতুলের কাছ থেকে ফোন নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন। যেই মুহূর্তে বিউগল বাজা শেষ, তখনই বাড়ির দক্ষিণের লেকের ওপার থেকে আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিনের দলের মেশিন গানের গুলি এসে আছড়ে পড়তে শুরু করে এই গাড়ির দেয়াল ও কাচের জানালায়। মর্টারের গোলার শব্দে পুরো বাড়ি কাঁপছিল। একটি গুলি বঙ্গবন্ধুর কাছ দিয়ে চলে গেল। অল্প সময় এই ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির পর কিছু সময়ের জন্য নিস্তব্ধতা। এ পরিস্থিতিতে গৃহকর্মীর দ্বারা বেগম মুজিব ওপর থেকে স্বামীর পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠালেন। বঙ্গবন্ধু বাইরে দরজার কাছে এসে সেন্ট্রিদের কাছে গোলাগুলির কারণ জানতে চেয়ে গেঞ্জি গায়ে দোতলায় নিজ বেডরুমে ফিরে গেলেন।

মেজর ফারুক ট্যাংক নিয়ে যখন ৩২ নম্বর রোডের পূর্বপ্রান্তে, তখন ওই স্থান থেকে মেজর নূর-বজলু গ্রুপ এবং ল্যান্সার মহিউদ্দিনের গ্রুপ পশ্চিম দিক থেকে লেকের ঢালুর আড়ালে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে ৬৭৭ নম্বর বাড়ির দিকে। ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির সুবেদার মেজর ওহাব জোয়ার্দারের নির্দেশে আগেই রাষ্ট্রপতির পুলিশ ও সেনা প্রহরীরা আত্মরক্ষার্থে মাটিতে শুয়ে পড়েছে।

বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামাল তিনতলা থেকে দ্রুত নিচে নেমে ‘পুলিশ ভাই, আর্মি ভাই-কিসের গোলাগুলি’ উচ্চারণ করে যখনি রিসিপশনের বাইরের দরজায়, ঠিক তখনি মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু এবং পেছনে সৈন্যদল উপস্থিত। কোনো সুযোগ না দিয়েই ক্যাপ্টেন বজলু শেখ কামালকে গুলি করা মাত্রই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলি খেয়ে শেখ কামাল যখন আর্তনাদ করে উঠেছিল তখন বঙ্গবন্ধু দোতলায় সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ফোনে কথা বলছিলেন। ইতিমধ্যে গুলির আঘাতে একজন সেনা ও পুলিশ সদস্য মারা পড়েছে। মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু যখন এই বাড়ির নিচতলা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত, তখন ল্যান্সার মহিউদ্দিনের গ্রুপ পশ্চিম দিক থেকে এবং ট্যাংক নিয়ে মেজর ফারুক ৬৭৭ নম্বর বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে। মেজর ফারুক চিৎকার করে বলতে থাকেন ‘কিল অ্যান্ড ক্রাশ এভরি বডি।’

প্রথম পর্যায়ের গোলাগুলি বন্ধ হলে আতংকিত মেজ ছেলে জামাল ও তার স্ত্রী রোজি, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা ও বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের বঙ্গবন্ধুর কক্ষে এসে জড়ো হয়েছেন। মেজর ফারুকের নির্দেশমতো মেজর মহিউদ্দিন ল্যান্সার ও কয়েকজন সৈনিক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে যখন দোতলায় পৌঁছে, তখনি বঙ্গবন্ধু কক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছিলেন। যুদ্ধংদেহি এই সেনাদলকে দেখে তিনি উচ্চ কণ্ঠে উচ্চারণ করেন ‘তোরা কী চাস, আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ এরই মধ্যে তারা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরে এবং নিচে নামিয়ে আনতে উদ্যত হয়। এক পর্যায়ে এভারেস্টের ওপর থেকে মাথা উঁচু করে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘তোরা বেয়াদবি করিস না’। এই সময়ে নিচ থেকে মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু ওপরে উঠছিল। বঙ্গবন্ধুর চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে মেজর নূর বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মুহূর্তেই সবাই সরে গেলে মেজর নূর তার হাতের এসএমজি থেকে বঙ্গবন্ধুর বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায়। যে মানুষটির বুকে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র, বাংলাদেশ যার সৃষ্টি, ১৮টি গুলিতে সেই মানুষটি সিঁড়িতেই প্রাণ হারান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনি নূর-বজলুরা নিচে নেমে যায়।

এরপর সেখানে উপস্থিত হয় কিছুক্ষণ আগে শেখ মনি দম্পতিকে খুন করে আসা মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের দল। প্রথমে বেগম মুজিব, পরে শেখ জামাল, নববধূ রোজি, সুলতানাকে হত্যা করে। নিচে শেখ নাসেরকে গুলি করলে তিনি পানির জন্য আর্তনাদ করছিলেন। নরপিশাচের দল পানির বদলে পুনঃগুলি দিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। সব শেষে দশ বছরের শেখ রাসেলকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করে দোতলায় নিয়ে যায়। তাকে আপনজনদের রক্তে ভাসমান লাশের ওপর ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে গুলি করলে এ নিষ্পাপ শিশুর মাথার মগজ বেরিয়ে যায়।

ইতিহাসের এ নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে বর্বর খুনিরা বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। তারা বাংলাদেশ বেতারকে পাকিস্তান স্টাইলে রেডিও বাংলাদেশ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের রণধ্বনি ও শক্তির উৎস ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশ জিন্দাবাদের লেবেল পরিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এক ঘণ্টার মধ্যে পাক প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো ক্যাবিনেট মিটিং ডেকে হাসি-তামাশা করে নতুন সরকারকে স্বীকৃতি এবং বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের জনগণের জন্য জাহাজভর্তি চাল পাঠানোর ঘোষণা দেন। ১৫ আগস্টের এ হত্যাকাণ্ড কেবল একজন জাতীয়তাবাদী নেতা ও তার পরিবারকে হত্যা নয়। এটি ছিল সভ্যতা, মানবতাকে হত্যা করা।

কিন্তু বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদের পরবর্তী জীবন সুখকর হয়নি। খুনি মোশতাক তার নিযুক্ত সেনাপ্রধান দ্বারা দীর্ঘ সময় জেলে এবং মুক্তির অবশিষ্ট দিনগুলো স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি ছিলেন। মৃত্যুর পর তার কবরেও মানুষ ঘৃণা ছুড়ে দিয়েছে। দীর্ঘ কারাভোগের পর তাহের ঠাকুর, ওবায়দুর রহমানরা ঘৃণিত জীবন নিয়ে মারা গেছে। নিঃসন্দেহে এ বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডে নৈতিক সমর্থন দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া- তার অমন মৃত্যুও আমাদের কাম্য ছিল না। প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যুর পর ভুট্টো যে উল্লাস করেছিল তা মুসলমানের কাজ নয়। অনেক শাস্তি পেয়ে অবশেষে ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছিল তাকে। তার পরিবার লণ্ডভণ্ড। মানুষের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, সে ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না। আমাদের ধর্মে যুদ্ধ ঘোষণা ব্যতীত মানুষ হত্যা হারাম করা হয়েছে। তারপরও এসব খুনি নারী-শিশুদের হত্যা করেছে। নবীর সতর্কবাণী উপেক্ষা করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এমনকি কারফিউ দিয়ে পিতার জানাজায় অংশ নিতে দেয়নি। ইনডেমনিটি আইন করে হত্যার বিচার থামিয়ে দিয়েছিল; কিন্তু পারেনি। ইতিমধ্যে পাঁচজনকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছে। বাকিরা ইঁদুরের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভিন্ন দেশের অলিগলিতে। ধিক তাদের কর্ম, ধিক তাদের জন্ম!

লে. কর্নেল এম সেরনিয়াবাত ফাঁনুস (অব.) : অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা

আরও পড়ুন