মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকেই ‘আব্বা’ বলে ডাকতো শেখ রাসেল

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ বছরের ছোট্ট সন্তান শেখ রাসেল। বাবা শেখ মুজিবকে ছাড়াই জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে তার।

বাবাকে দেখতে না পেয়ে মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে ‘আব্বা’ বলে সম্বোধন করতেন রাসেল। ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় এমনটিই লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা যায়, বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক বন্দি হয়ে কারাগারে কাটিয়েছেন দীর্ঘদিন। ফলে বাবার সান্নিধ্য বঞ্চিত হয়েছে আদরের রাসেলকে।

এ নিয়ে চাপা কষ্ট যেমন অনুভব করতেন ছোট্ট শিশু রাসেল, ঠিক তেমনি তার বাবা শেখ মুজিবও। যা স্পষ্টত ফুটে উঠেছে বঙ্গবন্ধুর লেখা আত্মজীবনীতেও।

১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের পর থেকেই রাজবন্দি হিসেবে জেলে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে দেখা করার সময় রাসেল কিছুতেই তার বাবাকে রেখে আসবে না। এ কারণেই তার মন খারাপ থাকতো।

‘কারাগারের রোজনামচা’য় শেখ রাসেলকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন ‘৮ ফেব্রুয়ারি ২ বছরের ছেলেটা এসে বলে, আব্বা বাড়ি চলো। ’ কী উত্তর ওকে আমি দিব।

ওকে ভোলাতে চেষ্টা করলাম ও তো বোঝে না আমি কারাবন্দি। ওকে বললাম, ‘তোমার মার বাড়ি তুমি যাও। আমি আমার বাড়ি থাকি। আবার আমাকে দেখতে এসো।’ ও কি বুঝতে চায়!

কি করে নিয়ে যাবে এই ছোট্ট ছেলেটা, ওর দুর্বল হাত দিয়ে মুক্ত করে এই পাষাণ প্রাচীর থেকে! দুঃখ আমার লেগেছে। শত হলেও আমি তো মানুষ আর ওর জন্মদাতা।

অন্য ছেলে-মেয়েরা বুঝতে শিখেছে। কিন্তু রাসেল এখনো বুঝতে শিখেনি। তাই মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে যেতে চায় বাড়িতে।

‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আব্বার সঙ্গে প্রতি ১৫ দিন পর আমরা দেখা করতে যেতাম। রাসেলকে নিয়ে গেলে ও আর আসতে চাইত না।

খুবই কান্নাকাটি করত। ওকে বোঝানো হয়েছিল যে, আব্বার বাসা জেলখানা আর আমরা আব্বার বাসায় বেড়াতে এসেছি। আমরা বাসায় ফেরত যাব। বেশ কষ্ট করেই ওকে বাসায় ফিরিয়ে আনা হতো।

আর আব্বার মনের অবস্থা কী হতো, তা আমরা বুঝতে পারতাম। বাসায় আব্বার জন্য কান্নাকাটি করলে মা ওকে বোঝাতেন এবং মাকে আব্বা বলে ডাকতে শেখাতেন। মাকেই আব্বা বলে ডাকত।’

কালের আলো অক্টোবর ১৮, ২০২০ লিন্ক

আরও পড়ুন