বাঙালির মুক্তিসনদ বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল

আবুল কাশেম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবন এবং বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ছয় দফা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই ছয় দফার মধ্য দিয়ে তিনি বাঙালি জাতিকে একটি জাতীয়তাবাদী চেতনা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাঙালির যে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পাওয়ার সক্ষমতা আছে তা ছয় দফা দিয়ে তিনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন বলা যায়।

ছয়দফা নিয়ে কথা বলতে গেলে দেখা যাবে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এটাকে দেখা হয়েছে। যেমন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, ১৯৬৫ সালের পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিকভাবে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ আরও ভিন্ন। আরও ভিন্ন এই অর্থে যে এটা ব্যাপক ও বিস্তৃত দৃষ্টিকোণ বলা যায়। আমরা যদি ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক অবস্থান দেখি তাহলে দেখব যে তিনি তখন অবিভক্ত বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন কলকাতায়। এই অবিভক্ত বাংলা ছিল অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থের একটি রাষ্ট্রের আকাক্সক্ষা। কিন্তু সেই উদ্যোগটি সফল হয়নি তৎকালীন পরিস্থিতিতে। তবে বঙ্গবন্ধুর মনে বাঙালি জাতীয় চেতনা গেঁথে ছিল এবং তিনি সেটা নিয়েই অগ্রসর হয়েছিলেন। তিনি জানতেন বাঙালি বেশি দিন পাকিস্তানের কাঠামোর ভেতরে থাকবে না। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে একটি ছাত্রসভায় বঙ্গবন্ধু এটা বলেওছিলেন।

আমি যদি এই দৃষ্টিকোণ থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করি এবং তা ছয় দফায় ফেলি তাহলে দেখা যাবে, ছয় দফাতে যে বিষয়গুলো ছিল তা ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের কাঠামোতেই মুসলিম লীগ বিরোধী রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক এলিটবৃন্দ কখনো জনসভায় বা কখনো নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে বা রাজনৈতিক দলের ঘোষণাপত্রের মতো বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপন করেছেন। সেগুলোই খুব স্পষ্টভাবে ছয় দফার মধ্যে নিয়ে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমরা যদি ভাষা আন্দোলন ধরি তাহলে দেখব এর সূত্রপাত ঘটেছে ১৯৪৭ সালেই এবং ভাষা আন্দোলনকে শুধু ভাষার দাবি না বলে যদি আমরা এভাবে বলি যে, এটা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের আত্মবিকাশের আকাক্সক্ষার ফল তাহলে ঐতিহাসিক বিবেচনায় এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটা ধারণ করা যায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই জিনিসটাকে প্রথম থেকেই ধরেছিলেন। ভাষার অধিকার অবশ্যই একটি জাতির নিজস্ব অধিকার। এই অর্থে ভাষা আন্দোলনকে স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম ধাপ বলাই যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর নিজের একটা লেখা বা রিপোর্টে আছে যে, ১৯৫৪ সালে গঠিত যুক্তফ্রন্টের ২৩৭ জনের মধ্যে ১৩৯ জন সদস্য ছিল আওয়ামী লীগের। পরবর্তীকালে বেশ কয়েকজন পাস করে তারাও যুক্তফ্রন্টে যোগ দিয়েছিল। আমি কৃষক-প্রজা পার্টি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দল এদের বাইরের কথা বলছি। আওয়ামী লীগ যুক্তফ্রন্টে অধিকতর প্রভাবশালী শক্তি ছিল এবং ২১ দফা কিন্তু তাদের নেতৃবৃন্দেরই তৈরি। আওয়ামী লীগের ১৯৪৯ বা ৫০ বা ৫৩ সালের যেসব পার্টিগত ডকুমেন্টস রয়েছে তাতে যে কথাগুলো বলা আছে, সে কথাগুলোর একটা বড় প্রভাব কিন্তু ২১ দফা কর্মসূচিতে ছিল। এটা একটা মাইলফলক ছিল রাজনৈতিক ইতিহাসে।

আবার ১৯৫৫ সালে যখন পাকিস্তানের ‘প্ল্যান পিরিয়ড’ শুরু হয়, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা যখন প্রণীত হয় তখন পূর্ব পাকিস্তানের যেসব অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ছিলেন বা অর্থনীতিবিদ ছিলেন তারা দুই পাকিস্তানের অর্থাৎ পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ‘আনইভেন গ্রোথ’কে দেখিয়েছিলেন। তারা বলেছিলেন যে পূর্ব পাকিস্তানকে যদি অর্থনৈতিক উন্নয়নে পশ্চিম পাকিস্তানের সমকক্ষ করতে হয় তাহলে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ করতে হবে। এটাকে ‘টু ইকোনমি থিওরি’ বা ‘দুই অর্থনীতি তত্ত্ব’ বলা হয়। রেহমান সোবহান, নুরুল ইসলাম, আনিসুর রহমানসহ আরও কয়েকজন ছিল এ তত্ত্বের উদ্ভাবক। আমি বলছি বাঙালি অর্থনীতিবিদরা এ জিনিসটা এনেছিলেন; কিন্তু এটা গৃহীত হয়নি।

আবার পাকিস্তানের কাঠামোতে আওয়ামী লীগ একটি প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সংবলিত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষেও কাজ করেছিল। একটি সংবিধানও রচিত হয়েছিল ৫৬ সালে। কিন্তু মাত্র দুই বছরের মধ্যেই সংবিধানটা বাতিল করা হয়। তখন আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করেন এবং মৌলিক গণতন্ত্র শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার পাওয়া দুরস্ত অর্থাৎ বহুদূরের ব্যাপার। অতএব তাদের আলাদাভাবে চিন্তা করতে হবে। যেমন ধরা যায়, ১৯৬২ সালে যখন ছাত্রদের দ্বারা আইয়ুববিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু পার্শ্ববর্তী ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশকে আলাদা করা যায় কি না, স্বাধীনতা নিয়ে আসা যায় কি না এ ব্যাপারে চিন্তা করার জন্য আগরতলায় গিয়েছিলেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা কিন্তু সত্য ঘটনা। আইয়ুব খান যখন মৌলিক গণতন্ত্র চালু করলেন এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে ভিন্ন খাতে নিয়ে গেলেন তখন বঙ্গবন্ধু মনে করলেন যেপাকিস্তানের সঙ্গে আর থাকা যাবে না। ১৯৬১ সালের শেষের দিকে কমিউনিস্ট পার্টির মণি সিংহ ও খোকা রায়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু যে গোপন মিটিং করেছিলেন তার ৫টি ‘সিটিং’ হয়েছিল। এতে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন পরিচালনা করার সময় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটিও উত্থাপিত হয়েছিল। কিন্তু তখন যেহেতু সময়টা অমন ছিল না তাই তিনি বলেছিলেন, ‘না ঠিক আছে। এটা আমাদেরও দাবি, এটা আমাদের করতে হবে’। এ ধরনের কথাও তখনই তিনি বলেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর যে রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী তিনিও তার আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধুর নাম উল্লেখ না করে বলেছিলেন, তার পার্টির যারা তরুণ নেতা তারা পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়টা অন্যভাবে চিন্তা করার কথা ভাবছে। তিনি আরও বলেছেন, এগুলো খুবই ইমম্যাচিউর প্রোপোজিশনএবং আমি এগুলো খুব শক্তভাবে পদদলিত করে রেখেছি।

যখন ৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দী মারা গেলেন তখন বঙ্গবন্ধু এনডিএফের মাধ্যমে আইয়ুববিরোধী আন্দোলন করা বিষয়ক সোহরাওয়ার্দীর পরিকল্পনা থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগকে আলাদাভাবে পুনরুজ্জীবিত করলেন। ৬৪ সালেও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকই থাকলেন, কিন্তু দলের প্রধান নেতৃত্ব তার হাতেই থাকল। তখন সভাপতি ছিলেন আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। এ অবস্থায় আমরা দেখছি যে ৬৫ সালের যুদ্ধ হয়েছে, এ যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান অরক্ষিত থেকেছে। এ ঘটনাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের লেখায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু যদি নিরাপত্তার ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে ছয় দফার ছয় নম্বর দফায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার কথা খুব হালকাভাবে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে পূর্ব পাকিস্তানে একটি প্যারা মিলিটারি বাহিনী গঠন করতে হবে এবং কালক্রমে যদি সম্ভব হয় তাহলে ২১ দফা অনুযায়ী নৌবাহিনীর সদর দপ্তর পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করা যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু যে ছয় দফা দিয়েছিলেন তাতে যে সমস্ত দাবি ছিলসেগুলো ছিল রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দাবি। যদি বলা যায় ছয় দফার মূল ধারণা ছিল অর্থনৈতিক তাহলে অতিরঞ্জন হবে না। যেমন ধরা যায়, এক ও দুই নম্বর দফায় বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক সরকার কাঠামো সম্পর্কে বলেছিলেন। এতে বলা হয়, পাকিস্তানে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হবে। এ কাঠামোয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে সবকিছু থাকবে। শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকবে। মুদ্রা সম্পর্কে তিন নম্বর দফায় বলেছিলেন, মুদ্রা দুই ধরনের হতে পারে। এই দফার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যভাবে যে সর্বদা অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে তা রোধ করা। এজন্যই তিনি সাংবিধানিক সুরক্ষার বিধান রাখার কথা বলেছিলেন। চার নম্বর দফায় বলা হয়েছে সমস্ত শুল্ক প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। এটা রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আয়ের একমাত্র বা গুরুত্বপূর্ণ উৎস। প্রশ্ন উঠতে পারে, এ উৎস যদি প্রাদেশিক সরকারের হাতে চলে আসে তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার চলবে কীভাবে? এই প্রশ্নের সমাধানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, প্রাদেশিক সরকার শুল্ক আয় থেকে কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেবে। পাঁচ নম্বর দফায় উপদফাও ছিল বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ব্যাপারে, বৈদেশিক বাণিজ্য কীভাবে হবে, রপ্তানি আয় কার হাতে থাকবে এসব নিয়ে। যেমন রপ্তানি আয় প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকার কথা বলা আছে। এখন প্রশ্ন আছে যে এটা তো বৈদেশিক আয়, তাহলে এটা যদি প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকে এবং বৈদেশিক সম্পর্কের বিষয়টা যদি কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকে তবে কেন্দ্রীয় সরকার বৈদেশিক মুদ্রা পাবে কোথায়? বঙ্গবন্ধু এখানে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার প্রদেশগুলো থেকে সংবিধান কর্তৃক নির্ধারিত হারে বৈদেশিক মুদ্রা পাবে।

একটা জিনিস বলে রাখা দরকার তা হচ্ছে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের যদি তুলনা করা যায় তাহলে দেখা যায় ৬২ শতাংশ থেকে ৬৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা পূর্ব পাকিস্তান থেকে অর্জিত হতো। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে যে জিনিসটা হয়েছে তা হলো আমদানির ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ছিল না। অর্থনীতিবিদরা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে পূর্ব পাকিস্তানের আমদানির তালিকায় শুধু ভোগ্যপণ্য ও কসমেটিক্স থাকত। কোনো হেভি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারিজ পূর্ব পাকিস্তানে আনা হতো না, এগুলো পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হতো। আবার দেখা যায়, পাকিস্তানের মোট বাজেটের ৬২ শতাংশ সামরিক খাতে ব্যয় হতো। ৭০-এর নির্বাচনের প্রাক্কালে দেওয়া এক ভাষণে বঙ্গবন্ধু এ কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু সামরিক খাতে উন্নয়নের সবকিছুই পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল। অর্থাৎ বাজেটের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ সামরিক খাতে ব্যয় হচ্ছে এবং এ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কোনোভাবেই আর্থিক বা সামাজিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। এ জিনিসটাই দেখাতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আর ছয় দফার শেষ দফায় প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠনের পাশাপাশি পূর্ব পাকিস্তানে একটি সমরাস্ত্র কারখানা তৈরির কথাও বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক এবং উদারনৈতিক ভাবধারার স্ফুরণ ঘটে ছয় দফার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ এই সময় থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি একটা গুরুত্বপূর্ণ অবয়ব লাভ করে। ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানে ছয় দফা ঘোষণা করার পর ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে ঢাকা বিমানবন্দরে আবার ছয় দফার কথা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু এবং সম্ভবত ১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ছয় দফা গ্রহণ করে। পরে ১৮, ১৯ ও ২০ মার্চে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছয় দফার ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা করেছিলেন। এ সম্মেলনেই তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। ছয় দফাকে জনপ্রিয় করার জন্য এই সম্মেলনেই ছয় দফা অনুমোদিত হয়।

এভাবে দেখলে দেখা যাবে যে ষাটের দশকের একেবারে মধ্যভাগ থেকে বাঙালির যে রাজনৈতিক চেতনা এবং রাজনৈতিক অগ্রগতি সেটাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি একক নেতায় পরিণত হন। ছয় দফাই বাঙালিকে পরবর্তীকালে স্বাধীনতার এক দফার দিকে যায়। বঙ্গবন্ধুকে অন্য দলের একজন রাজনৈতিক নেতা মোজাফফর আহমদ বলেছিলেন, ছয় দফা কেন? একদফা নয় কেন? তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘এক দফাই দিয়েছি, একটু ঘুরিয়ে দিয়েছি। তোরা বুঝে নিস।’

লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক

শ্রুতিলিখন : সাকিব আবদুল্লাহ

সূত্র: দেশ রূপান্তর

আরও পড়ুন