বঙ্গবন্ধুর খুনি ডালিম-রশিদ পাকিস্তানে: শেখ হাসিনা

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

‘ডালিম পাকিস্তানে আছে তখন থেকে। রশিদ পাকিস্তান-লিবিয়াতে থাকে। মাঝে মাঝে ডালিম কেনিয়াতেও যায়। সে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়েই চলে। মোসলেম উদ্দিনের খোঁজ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়, মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় না। এ অবস্থার মধ্যে আছে। …পাকিস্তান সরকারকে বহুবার বলা হয়েছে। তারা কখনও দেয়ও না, স্বীকারও করে না।’

বঙ্গবন্ধুর পলাতক যে তিন খুনির অবস্থান বিষয়ে এতদিন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তার মধ্যে একজন পাকিস্তানে এবং একজন পাকিস্তান ও লিবিয়ায় যাতায়াত করেন বলে জানিয়েছেন জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিষয়টি পাকিস্তানকে জানানো হলেও সে দেশের সরকার স্বীকার করে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুর তিন পলাতক খুনির বিষয়ে তথ্য দিলে সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণার পরদিন জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় এ কথা বলেন সরকারপ্রধান।

১৫ আগস্ট শোক দিবসের পরদিন সোমবার এই আলোচনার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি এই আয়োজনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবন থেকে।

তিনি বলেন, ‘আজকে খুনিদের বিচার হয়েছে। যারা কয়েকজন পলাতক তাদের মধ্যে ডালিম পাকিস্তানে আছে তখন থেকে। রশিদ পাকিস্তান-লিবিয়াতে থাকে। মাঝে মাঝে ডালিম কেনিয়াতেও যায়। সে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়েই চলে।

‘মোসলেম উদ্দিনের খোঁজ মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়, মাঝেমধ্যে পাওয়া যায় না। এ অবস্থার মধ্যে আছে।’

এবার ১৫ আগস্টের আগে শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়ে সমবেদনা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তবে দেশটির বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকারকে বহুবার বলা হয়েছে। তারা কখনও দেয়ও না, স্বীকারও করে না।’

আগের দিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের বিষয়ে তথ্য দিলে সরকার পুরস্কার দেবে।

বঙ্গবন্ধুর যে ১২ খুনির ফাঁসির আদেশ হয়েছে, তাদের মধ্যে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মুহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

গত বছরের ১২ এপ্রিল আরেক খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আবদুল মাজেদকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আরেক খুনি আজিজ পাশা।

বাকি খুনিদের মধ্যে নুর চৌধুরী কানাডায় আর রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তাদের ফিরিয়ে আনতে চলছে আলোচনা।

বাকি তিন খুনি শরিফুল হক ডালিম ওরফে মেজর ডালিম, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আব্দুর রশীদ ও রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেম উদ্দিনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য এবারই প্রথম প্রকাশ করা হলো সরকারের পক্ষ থেকে।

কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘নুরকে কানাডা থেকে ডিপোর্ট করার কথা ছিল। সে সময় কানাডিয়ান হাইকমিশনার যে ছিল, সে ছিল মোশতাকের (খোন্দকার মোশতাক আহমেদ) দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের পক্ষের ছেলে রফিক। সে কিন্তু রাষ্ট্রদূত হিসেবে তার যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল, তা করে নাই। ওখানে আমাদের প্রবাসীরা এবং আমরাও চেষ্টা চালাচ্ছি তাকে আবার ফেরানো যায় কি না।’

নেপথ্যে কারা

শেখ হাসিনা বক্তব্য দেয়ার আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভূমিকা আছে বলে নানা যুক্তি দেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে আসলে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী পত্রপত্রিকা ঘেঁটে দেখার পরামর্শ দেন। বলেন, এই হত্যার পেছনে যারা, তাদের পরিচয় প্রকাশ পাবে।

তিনি বলেন, ‘যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত এবং যারা এভাবে ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে সবাই সমান দোষী। হত্যার বিচার জরুরি ছিল, ধীরে ধীরে কারা জড়িত সেটাও বের হবে। সে দিন দূরে নয়।’

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিভক্তি, জাসদের জন্ম, পাকিস্তানপন্থিদের গোপন তৎপরতার বিষয়টি তুলে ধরার পাশাপাশি সে সময়ের পত্রিকায় নানা সমালোচনার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বছরের পর বছর লেগে যায়। কিন্তু একটি বছরও সময় দেয়া হলো না। সাথে সাথে সমালোচনা শুরু হলো। আর ধৈর্য ধরা হলো না। এটা হলো না কেন, এটা নাই কেন নানা কথা লেখা হলো। কারা লিখেছিল? কাকে খুশি করতে এবং কারা এই হত্যাকাণ্ডের গ্রাউন্ড তৈরি করছিল?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি যারা সরাসরি হত্যা করেছে, তারা নিজেরা স্বীকার করেছে। বিবিসি ইন্টারভিউতে রশিদ-ফারুক বসে বলেছে তারা হত্যা করেছে। তার কারণ, একটা চেষ্টা ছিল বঙ্গবন্ধুকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরানোর। অনেক অপপ্রচার চালিয়েও তাকে দূরে সরাতে পারেনি। আর সরাতে পারে নাই বলেই তারা এ হত্যাকাণ্ডটা ঘটিয়েছে, এটাই বাস্তবতা।

‘কাজেই তখন যারা সমালোচনা লিখেছে তারা তো এদেরই দোসর হিসেবে গ্রাউন্ড তৈরি করছিল। সেটা একটু আপনারা স্মরণ করে রাখবেন। তাহলে আর আপনাদের বেশি দূর যেতে হবে না খুঁজতে।’

নিউজ বাংলা ২৪, ১৬ আগস্ট, ২০২১, লিঙ্ক 

আরও পড়ুন