আকাশ ছোয়া জনপ্রিয় স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতার সঙ্গে ছিল ফটো সাংবাদিকদের গভীর হৃদ্যতা

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যে সকল ফটোসাংবাদিক মাঠে ময়দানে কাজ করতেন তাদের সকলকেই জাতির পিতা নাম ধরে চিনতেন। জাতির পিতার বাড়ির দরজা ছিল সকল ফটো সাংবাদিকের জন্য উন্মুক্ত। নির্ভয়ে নিরাপত্তার করিডোর পেরিয়ে অবাধ যাতায়াত ছিল তাদের। বিভিন্ন সময় তিনি ফটো সাংবাদিকদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা ও মনের ভাব প্রকাশ করতেন। কখনো বুঝতে দিতেন না তিনি একজন জাতির পিতা ও রাষ্ট্র নায়ক। আকাশের মতো বিশাল ও সমুদ্রের মতো গভীর হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। প্রয়াত ফটোসাংবাদিক জহির ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতে জাতির পিতা তার কানে মলা দিয়ে ঠাট্টা করছিলেন, এই দৃশ্য পৃথিবীতে আজ বিরল। এমন অনেক ঘটনাই বিভিন্নভাবে ইত্তেফাকের ডার্করুমে আড্ডাচ্ছলে উঠে আসতো। সবার জুনিয়র হিসেবে তখন শুনে যেতাম। আজ সময় এসেছে সেগুলে নিয়ে দু-চার কথা লেখার। যা নিজ কানে শুনেছি। তেমন কয়েকটি ঘটনার একটি হলো-

প্রয়াত ফটোসাংবাদিক রশিদ তালুকদারের ছোট ভাই চুন্নুকে নিয়ে। একবার গ্রাম থেকে ঢাকায় আসলেন জাতির পিতাকে সরাসরি দেখবেন বলে। রশিদ তালুকদার সময় বুঝে তার ছোট ভাই চুন্নুকে একদিন ৩২ নম্বর রোডের ধানমন্ডির বাড়িতে নিয়ে জাতির পিতার সঙ্গে দেখা করালেন। জাতির পিতা তার চিরায়ত আঞ্চলিকতার মধুমিশ্রিত ভাষায় রশিদ তালুকদারকে বললেন- রশিদ টুংগীপাড়ার বাড়ি থেকে বড় বড় কইমাছ আনছি, সেই মাছ আজ বাসায় রান্না হইছে। তুই তোর ছোট ভাইকে নিয়ে খেয়ে যাবি।

তখনকার দৈনিক ইত্তেফাকের চার তলায় ডার্করুমে বসা দেশসেরা তিন ফটোসাংবাদিক রশিদ তালুকদার, আফতাব আহমদ ও মোহাম্মদ আলম। রশিদ ভাইয়ের তোলা ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, আলম ভাইয়ের তোলা ২৫ মার্চের নির্মম হত্যাকাণ্ড, আফতাব ভাইয়ের তোলা ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্থানী বাহিনীর আত্মসমর্পণ। এই নিয়ে কথা উঠলো। তখন রশিদ ভাই, আলম ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন- আলম তুই তো জাতির পিতা ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফার ছিলি আমার একটি স্মরনীয় অভিজ্ঞতার কথা শোন। আমার যতটুকু মনে পরে ৭২ বা ৭৩ সালে কোন একদিন দুপুরের একটু পড়ে আমি জাতির পিতার ধানমন্ডির বাড়িতে গেলাম। দো’তলায় জাতির পিতা ওনার রুম থেকে আমাকে দেখে বলেন- এই রশিদ কী খবর, কী মনে কইরা তুই এই সময়ে আমার এখানে?
রশিদ ভাই উত্তর দেয়- আপনাকে দেখতে আসছি। জাতির পিতা রুম থেকে বাহিরে এসে রশিদ ভাইয়ের কাঁধে হাত দিয়ে বাড়ির রান্না ঘরের ভিতরে নিয়ে নিজে বিভিন্ন হাড়ির ঢাকনা তুলে দেখতে লাগলেন হাড়ির ভিতরে কি কি খাবার আছে। রশিদ ভাই বলেন- আমি দুপুরের খাবার খেয়ে এসেছি। জাতির পিতা বলেন- রশিদ তুই আমার সাথে মিথ্যা কথা বলবি না। তোর মুখ শুকনা শুকনা লাগছে তুই দুপুরে না খেয়ে আমার বাড়িতে আসছোস। যা কিছু আছে তাই দিয়ে খেয়ে নে। রশিদ তালুকদার সেইদিন আপসোস করে বলেছিলেন- এমন মহান নেতা পৃথিবীতে আর কখনো আসবে না।

_ইয়াসিন বাবুল_
সহ-সভাপতি বাংলাদেশ ফটোসাংবাদিক এসোসিয়েশন

 

আরও পড়ুন