চেতনায় বঙ্গবন্ধু

সম্পাদনা/লেখক: Zakir Hossain

রেহমান সোবহান
১৯৭০ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের আগে পূর্ব পাকিস্তানে একটি গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল। গল্পটি এ রকম_ কুষ্টিয়ায় এক প্রার্থী প্রত্যন্ত গ্রামে ভোট চাইতে গেলে তাকে ভদ্রভাবে ফিরিয়ে দেয় গ্রামবাসী। তারা জানায়, বিপক্ষ প্রার্থীকেও ভোট দেবে না তারা। তখন সেই প্রার্থী চমকে গিয়ে প্রশ্ন করেন, গ্রামবাসী তাহলে কাকে ভোট দেবে? উত্তর আসে, ‘আমরা শেখ মুজিবউদ্দিনকে ভোট দেব।’ ওই আসনে শেখ মুজিবউদ্দিন নামে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। গ্রামবাসীর কথার মানে হলো, শেখ মুজিব যাকে প্রার্থী করবেন তাকেই গ্রামবাসী ভোট দেবে। সেটা রহিম উদ্দিন, করিম উদ্দিন, ছলিম উদ্দিন- যেই হোন না কেন।
বাঙালির সংগ্রামকে লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার সংকেত ইতিহাস শেখ মুজিবকে দিয়েছে। সেটা ছিল বঙ্গবন্ধুর ক্ষমতা, যা ওই সব মানুষকে স্বাধীনতার সংগ্রামে সংযুক্ত করতে পেরেছিল।

হাসান আজিজুল হক
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জন্য চিরকালের গৌরব হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের জন্য যে দীর্ঘ সংগ্রাম, তাতে যিনি প্রধান নায়ক ছিলেন, সবাইকে ছাপিয়ে যার মাথা সারা পৃথিবীর লক্ষ্যগত হয়েছিল, সেই নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি সেই মানুষ, যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে বাঙালিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একজন নেতার সব রকম গুণ ছিল। তার মধ্যে যেটি ছিল না, সেটি হচ্ছে কূটবুদ্ধি। তিনি মানুষকে খুব সহজেই বিশ্বাস করতেন, যার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছিল।

আসাদ চৌধুরী
বাঙালির সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু, আজ তার জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। একাত্তরে তিনি বলেছিলেন- এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। তার চিন্তা ও স্বপ্নে ছিল আজকের বাংলাদেশ। ভাষাকে কেন্দ্র করে আমরা জাতিসত্তাকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছিলাম। পাকিস্তান অন্যায় আচরণ করেছিল বলেই আমরা সচেতন হয়েছিলাম। আর এ সংগ্রামে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
আমার শৈশব-কৈশোর- তারুণ্যের স্মৃতিতে বঙ্গবন্ধু বেশ স্পষ্ট। ওই সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন আমাদের প্রতিদিনের ইতিহাসের কেন্দ্রে। আমরা তার কথা শুনতাম, তাকে অনুসরণ করতাম; তার কাজকর্মের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতাম। সামরিক শক্তির বিপরীতে গণতন্ত্র, ডানপন্থি প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে প্রগতিবাদী ও সেক্যুলার রাজনীতি এবং নিয়ন্ত্রণকামী শক্তির বিরুদ্ধে অংশগ্রহণমূলক সামাজিক-রাজনৈতিক চর্চার বিকাশ ঘটাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন তিনি। ১৯৬৬ সালে তিনি যে ৬ দফা সনদ ঘোষণা করেন, তা ছিল এসব চর্চার আকাঙ্ক্ষার নিকষিত রূপ। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম আমাদের সবারই সংগ্রাম।

রাজনীতিতে আদর্শ ও মূল্যবোধের চর্চায় এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু। সবাইকে আপন করে নেওয়ার এক অসাধারণ গুণ ছিল তার। মুক্তিযুদ্ধের আগে আমি আমার দুই ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরছি। একই ফ্লাইটের সামনের দিকে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নাম অনেক মাধ্যম থেকে আমি শুনেছি, পত্রপত্রিকায় পড়েছি। কিন্তু সামনাসামনি দেখা হয়নি। ফ্লাইটটি ঢাকায় পেঁৗছার পর তিনি আমায় ডেকে বললেন- ‘কবরী, আমরা চলে এসেছি। তুমি তোমার ছেলেদের ডেকে তোলো।’ তিনি আমায় কত আপন করে ‘কবরী’ বলে ডাকলেন! তার জন্মদিন আমাদের জন্য একটা শুভক্ষণ।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তার জীবনের বেশির ভাগ সময় সাধারণ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে ব্যয় করেছেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি আন্দোলন-সংগ্রাম, না হয় জেলে থেকেছেন। এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছে- এই সত্যকে কেউ কোনোদিন মুছে ফেলতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাধারণ কোমল মনের মানুষ। সর্বদাই বাঙালি জাতির কল্যাণ ও মঙ্গল চিন্তা-চেতনার মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছেন। আমরা যদি নতুন প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর চেতনা, দেশাত্মবোধ জাগ্রত করতে পারি; বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শকে তারা যদি নিজেদের জীবনে প্রতিফলন করে অনুসরণ করতে পারে, তাহলেই সম্ভব হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া। তাই, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।

সুলতানা কামাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু সব সময়ই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। লুটপাটের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কথা বলব, আবার লুটপাট করব। আর লুটপাট না করতে পারলে নৈরাজ্য সৃষ্টি করব- এটা হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসীরা কখনোই লুটপাটকারী হতে পারে না। সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করতেই হবে। সেটা ধারণ করতে হবে স্বচ্ছভাবে, সততার সঙ্গে। তবেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত জয় সুনিশ্চিত হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করলে অসাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ দূর করা সম্ভব। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সৃষ্টি হয়েছিল। আজ দেশ সাম্প্রদায়িক চেতনার দিকে ধাবিত হচ্ছে। প্রজন্মকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জেনে এগিয়ে যেতে হবে।

১৭ মার্চ ২০১৭ । সূত্র: দৈনিক সমকাল । লিঙ্ক

আরও পড়ুন