খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন
তার নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয়।

বেঁচে থাকলে আজ বঙ্গবন্ধুর বয়স হতো ১০১ বছর। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাবা-মা আদর করে তার নাম রেখেছিলেন খোকা। সেই খোকাই পরবর্তীতে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন, ভালোবেসে যাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদানের মাধ্যমে। ১৯৪৬ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। দেশ ভাগের পরপরই বাংলার ওপর উর্দু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা হলে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৪৯ সালে তিনি নির্বাচিত হন তৎকালীন আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সম্পাদক।

কয়েক বছরের মধ্যেই, ১৯৫৩ সালে তিনি পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের টিকিটে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠায় পশ্চিমা শাসকদের বিরুদ্ধাচরণ করায় বহুবার কারাবরণ করেছেন এই অবিসংবাদিত নেতা।

স্বাধীনতার পথে বাঙালি জাতি যে কয়েকটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলেছে, প্রত্যেকটিতে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা ও পরবর্তীতে ১১ দফা আন্দোলন ছিল তার নেতৃত্বের ফসল। তার অসামান্য অবদানের জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দেয়া হয়।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পায়। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে শুরু করে নির্যাতন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য জাতিকে প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে এই ভাষণ ইউনেস্কোর ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐতিহাসিক সেই ভাষণ এখন বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালি নিধনে নামলে ওই রাতেই গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি। তার নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে রুখে দাঁড়ায় বাঙালি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয়।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধু। বিংশ শতাব্দীতে নির্যাতিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যারা বিশ্বনন্দিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিরামহীন সংগ্রামে অবদান রাখার জন্য তিনি বিশ্বশান্তি পরিষদ প্রদত্ত জুলিও কুরি পদকে ভূষিত হন।

বিবিসির এক জরিপে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করতে শুরু করেন, ঠিক সেই মুহূর্তে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও কায়েমী স্বার্থান্বেষী মহল তার বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র শুরু করে। ওই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নিহত হন এই মহান নেতা।

 

আশিক হোসেন, ঢাকা
১৬ মার্চ, ২০২১ লিঙ্ক 

আরও পড়ুন