Bangabandhu Online ArchiveBangabandhu Online ArchiveBangabandhu Online ArchiveBangabandhu Online Archive
  • মূল পাতা
  • বঙ্গবন্ধু
    • এক নজরে
    • জন্ম ও বেড়ে ওঠা
    • মুক্তি সংগ্রামে
      • ভাষা আন্দোলন
      • ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬
      • আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ১৯৬৮
      • ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান
      • ১৯৭০ এর গণনির্বাচন
      • ১৯৭১
        • জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি
        • ২রা মার্চ
        • ৭ মার্চের ভাষণ
        • উত্তাল মার্চ
        • ২৫শে মার্চ
        • স্বাধীনতার ঘোষণা
        • মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু
        • পাকিস্তান কারাগারে বঙ্গবন্ধু
    • হত্যাকাণ্ড
    • শাসনামল
      • অর্থনীতি
      • কৃষিক্ষেত্র
      • স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
      • নবরাষ্ট্র পুনর্গঠন
      • অর্থনীতি
      • পররাষ্ট্র নীতি
      • সামরিক ক্ষেত্র
      • বাকশাল
      • বিবিধ
    • পরিবার
      • বঙ্গ মাতা
      • শেখ হাসিনা
      • শেখ কামাল
      • শেখ জামাল
      • শেখ রেহানা
      • শেখ রাসেল
      • এম এ ওয়াজেদ মিয়া
      • সজীব ওয়াজেদ জয়
      • সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
      • রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিক
      • টিউলিপ সিদ্দিক
    • অর্জন ও স্বীকৃতি
    • ভাষণ
    • রচনা সমূহ
    • বঙ্গবন্ধু বিরোধী ষড়যন্ত্র
    • বিষয়ভিত্তিক
      • শিশুবন্ধু বঙ্গবন্ধু
      • বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন
  • প্রকাশনা
    • গ্রন্থাবলি
    • রচনা ও নিবন্ধ
    • সংবাদ
    • উপসম্পাদকীয়
    • কবিতা ও গান
  • অডিও ও ভিডিও
    • বক্তব্য/ভাষণ/সাক্ষাৎকার
    • ডকুমেন্টারি ও সংবাদ
  • স্থির চিত্র
  • বিবিধ
  • বিশেষ
  • সামাজিক গণমাধ্যম
    • ফেসবুক
    • ইউটিউব
    • টুঁইটার

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের হয়ে লড়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী

    Home বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধুর অর্জন ও স্বীকৃতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের হয়ে লড়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী
    NextPrevious

    বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণেই বাংলাদেশের হয়ে লড়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী

    By Zakir Hossain | বঙ্গবন্ধুর অর্জন ও স্বীকৃতি, বাঙ্গালির মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু | 0 comment | 23 January, 2021 | 0

    বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছিল ভারত। মূলত শোষণমুক্তির জন্য পাকিস্তানি সেনাদের বন্দুকের নলের মুখে নিরস্ত্র বাঙালির স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ, অমিত বিক্রম, জাতীয়তাবোধ ও দেশপ্রেম, এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থা ও মুগ্ধতার কারণে শুরু থেকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে গেছেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরের দিনই, ২৭ মার্চ, লোকসভার ভাষণে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ শুধু একটি আন্দোলন দমনের জন্যই নয় বরং সেখানে নিরস্ত্র জনতার ওপর ট্যাংক নামানো হয়েছে। সেখানে কী ঘটেছে এবং আমাদের কী করণীয় এ সম্পর্কে আমরা সক্রিয় আছি।’

    এখানে একটি ব্যাপার উল্লেখ না করলেই নয়, ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একচেটিয়া জয় হয় আওয়ামী লীগের। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে যে জাতিকে জাতীয়তাবোধে উদ্ধুদ্ধ করেছেন বঙ্গবন্ধু, তারই ফলাফল পূর্ববাংলার মোট ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে বিজয়। কিন্তু দুই পাকিস্তানের মধ্যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হওয়ার পরেও আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে দেয়নি পাকিস্তানি সামরিক সরকার। আলোচনার ছদ্মবেশে সময়ক্ষেপণ করে তারা। এরমধ্যে ধীরে ধীরে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অস্ত্র ও সেনাবাহিনী নিয়ে আসা হয়। পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতিকে সার্বিক নির্দেশনা দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরমধ্যেই, ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অতর্কিত ঘুমন্ত বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। তাৎক্ষণিকভাবে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এরপরেই গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। পরবর্তীতে তার নামেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালিত হয়। সেসময় আমাদের প্রবাসী সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে তৎপরতা চালিয়েছেন। তবে তখনও বাংলাদেশ কোনো স্বীকৃত স্বাধীন রাষ্ট্র না হওয়ায়, বিশ্বনেতাদের কাছে সেসব প্রচেষ্টা কোনো গুরুত্ব পায়নি। এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন এ বিষয়ে কথা বলেছেন, বিশ্বনেতাদের কাছে সেটির অর্থ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।

    মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৩ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে দিল্লিতে আলোচনা হয় আওয়ামী লীগ নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের। সেসময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে উত্থাপন করে তার পক্ষ থেকে সহযোগিতা চান। এরপর এই যুদ্ধে সহযোগিতার আশ্বাস দেন শ্রীমতি গান্ধী। ১৩ এপ্রিল লাখনৌতে তিনি বলেন, ‘পূর্ব বাংলায় যা হচ্ছে, তাতে ভারত সরকার নীরব হয়ে থাকবে না।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে যুক্ত। অবশ্যই এই দুটি দেশে তাদের পারস্পরিক বিষয় সৌহার্দ্যপূর্ণ হবে।’

    ৭ মে সম্মিলিত বিরোধী দলের বৈঠকে ইন্দিরা গান্ধী যখন বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন, তখন অনেকে বলেছিলেন যে- ‘ভারতের অভ্যন্তরের বিষয়ে অন্য কেউ নাক গলালে কেমন হবে, এক্ষেত্রে কাশ্মীরের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’ জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন- ‘কাশ্মীরে কিছু স্বার্থবাদী হাঙ্গামা রাখতে চায় কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়টি তেমন নয়, সেখানে জনসমর্থন আছে।’ মূলত বঙ্গবন্ধুর একচেটিয়া জনসমর্থনের ওপর আস্থা রেখেই বাংলাদেশের ব্যাপারে আস্থাশীল ছিলেন শ্রীমতি ইন্দিরা। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে তিনি আলাদাভাবে কল্পনাও করেননি কখনো। এই আস্থা থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি একাধিকবার ছুটে গেছেন বিশ্বনেতাদের কাছে। ১৯৭১ সালের ১৩ মে বিশ্বশান্তি সংঘের সম্মেলনে বাংলাদেশের বিষয়ে বার্তা পাঠান তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সেই বার্তা ৮০টি দেশের প্রায় সাতশ’ প্রতিনিধির সামনে পড়ে শোনানো হয়। সেখানে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনসাধারণের ন্যায্য দাবি, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা তাদের দেশ শাসন করবেন। আশা করি, বিশ্বের মানুষ এই দাবি সমর্থন করবেন এবং তাদের অধিকার পুনরুদ্ধারের জন্য সচেষ্ট হবেন।’

    একদিকে যেমন যুদ্ধ চলছিল, অন্যদিকে জেলের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল পাকিস্তানি জান্তারা। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভোটে বিজয়ী নেতাকে প্রহসনের এক বিচারের মুখে ঠেলে দিয়ে ফাঁসিতে ঝোলানোর বন্দোবস্ত করেছিল পাকিস্তানিরা। এই খবর জানতে পেরে ষড়যন্ত্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেন শ্রীমতি ইন্দিরা। ৮ আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার সরকারের পক্ষ থেকে প্রেরিত এক বার্তায় বিশ্বের সব দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের প্রতি শেখ মুজিবের জীবন রক্ষা ও মুক্তির দাবি জানিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা হচ্ছে যে, বিচারের নামে প্রহসনের আড়ালে শেখ মুজিবকে হত্যার চক্রান্ত হয়েছে। এই হত্যা সংগঠিত হলে পূর্ববাংলার অবস্থা আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে।’ দুদিন পরই, ১১ আগস্ট, শ্রীমতি গান্ধী বিশ্বের ২৪টি দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের কাছে মুজিবের প্রাণ রক্ষার জন্য তাদের প্রভাব খাটানোর আবেদন জানান।

    ইন্দিরা গান্ধীর তৎপরতার কারণেই ১৭ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের জেনেভার আন্তর্জাতিক আইন সমিতির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নিকট তার-বার্তায় শেখ মুজিবের মুক্তির দাবি করা হয়। এরপর ২০ আগস্ট ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি থেকে বিশ্ব শক্তি পরিষদ শেখ মুজিবের মুক্তির দাবি করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে।

    ২১ অক্টোবর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী ও যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ টিটোর এক যুক্ত বিবৃতিতে পাকিস্তানকে সাবধান করে দিয়ে বলা হয়, ‘বিগত নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থহীন রায় উপেক্ষা করা হলে সমস্যা জটিলতর হতে বাধ্য। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান অবশ্য প্রয়োজন।’

    এদিকে ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের প্রথম দিকেই বাংলাদেশের অনেক স্থান মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে যায়। এসময় ভারতের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকানোর জন্য পাকিস্তানি কেন্দ্রীয় সেনাকমান্ড ঢাকা সেনানিবাস থেকে ব্যাপক সংখ্যক সৈন্য সীমান্ত এলাকায় পাঠায়। তা দেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভাবলেন, এই পরিস্থিতি বিশ্ববাসীকে জানানোর সময় এসেছে। তাই ২৪ অক্টোবর তিনি ১৯ দিনের জন্য বিশ্ব সফরে বের হন। এসময় শ্রীমতি গান্ধী ইউরোপ ও আমেরিকার বহুদেশ সফর করেন। তার এই সফর ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

    ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সঙ্গে আলোচনাকালে শ্রীমতি গান্ধী বলেন, ব্রিটেনকে ভারতীয় উপমহাদেশের ব্যাপারে জড়াতে চান না তিনি। তবে বর্তমান সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের উদ্দেশ্যে কারারুদ্ধ নেতা শেখ মুজিব কিংবা তার সহকর্মীদের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনা শুরু করার ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারকে রাজি করার জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন বলে তিনি আশ্বস্ত হতে চান।

    ব্রিটেনে সফররত অবস্থায় বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেন ইন্দিরা গান্ধী। সেসময় বিবিসির সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন- ‘ভারত যদি বাংলাদেশের গেরিলাদের সবরকম সাহায্য বন্ধ করে দেয়, তাহলে সেখানকার সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ হয়ে যাবে কিনা?’ এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই না। তারা (বাংলাদেশের জনগণ) কারো মুখাপেক্ষী হয়ে ২৫ মার্চ রাতে হাতে অস্ত্র তুলে নেয়নি। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচুর সংখ্যক বাঙালি বাস করছে, তারা ইতোমধ্যে সংগঠিত হয়ে তাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সব রকম সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছে। এছাড়াও বাংলাদেশের হাজার হাজার সেনা, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার সদস্য রয়েছেন; যারা যুদ্ধ করতে পারদর্শী এবং তারা তাদের অস্ত্রশস্ত্রসহ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন।’ স্বাধীনতার জন্য বাঙালির স্পৃহা এবং টগবগ করতে থাকা জাতীয়তাবোধ তাকে এতাটাই মুগ্ধ করেছিল যে, রণাঙ্গণের যোদ্ধাদের প্রতি তার মনে অসীম শ্রদ্ধা জাগ্রত হয়েছিল। আর তিনি এটাও জানতেন যে, বাঙালির এই জাগরণ সম্ভব হয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর জন্য। তাই বঙ্গবন্ধুকে যাতে পাকিস্তানিরা হত্যা করতে না পারে, সেজন্য তিনি প্রতিনিয়ত বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন।

    বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, ব্রিটেন ঘুরে এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র যান ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নিক্সন একে গৃহযুদ্ধ অভিহিত করে পাকিস্তানের পক্ষে সমাধানের প্রস্তাব দিলে তিনি তা নাকচ করে দেন। এরপর ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘পূর্ববাংলায় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মতামতের মূল্য দেওয়া হয়নি। সেই নির্বাচনে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েও গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ পায়নি। পক্ষান্তরে পাকিস্তানি সেনা শাসকেরা আলোচনার নামে গোপনে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়ে বাংলার সাধারণ মানুষদের হত্যা করার চক্রান্ত করেছে। কাজেই বর্তমানে সেখানে যা ঘটেছে, তাকে গৃহযুদ্ধ বলা যাবে না বরং তা যুক্তিগ্রাহ্য রাজনৈতিক পন্থায় অধিকার আদায়ের যুদ্ধ।’

    শ্রীমতি গান্ধী তার ভাষণে শেখ মুজিব সম্পর্কে বলেন, ‘শেখ মুজিব একজন অসাধারণ নেতা। তার সঙ্গে কারো কোনো তুলনা চলে না। যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ব্যবধানে তিনি জয়লাভ করেছেন, তা এক অসামান্য ঘটনা। তিনি চিন্তা চেতনায় একজন আধুনিক মানুষ। পাকিস্তান সরকার তার সেই সাফল্যকে নস্যাৎ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফলকে অস্বীকার করছে। যার ফলশ্রুতি হিসেবে পাকিস্তানি সামরিক সরকার ২৫ মার্চ পূর্ববাংলায় এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক হত্যার মধ্য দিয়ে যার শুরু। ঘটনা কেবল সেখানেই থেমে থাকেনি। লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভারতে ঠেলে দেওয়া হয়েছে চরম অত্যাচারের মাধ্যমে। এসব জনগণের অপরাধ, তারা সামরিক সরকারকে ভোট দেয়নি।’

    যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া সেই ভাষণে তিনি আরো বলেন, ‘পূর্ববাংলার মানুষ এখন স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার, তাদের নেতা শেখ মুজিবকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে চালান দেওয়া হয়েছে। ঘটনার অনিবার্যতা তাদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনে বাধ্য করছে।’

    ৭ নভেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী চার দিনের সরকারি সফরে ফ্রান্সের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর মধ্যেই পাকিস্তানের স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান তার সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে ফ্রান্স ছাড়ার পূর্বেই তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে আমার আলোচনার কিছু নেই। শেখ মুজিবের সঙ্গে আলোচনাই বর্তমান সমস্যার কার্যকর সমাধান হতে পারে। কারণ তিনিই বাঙালি জনগণের নির্বাচিত নেতা। তাছাড়া বাংলাদেশের জনগণের অনুমোদনক্রমে যে কোনো সমাধানই সম্ভব হতে পারে।’

    সফর শেষে ভারতে ফেরার পর ১৫ নভেম্বর পাকিস্তানের যুদ্ধ-পরিস্থিতির কারণ সম্পর্কে নিউজ উইক পত্রিকাকে শ্রীমতি গান্ধী বলেন, ‘ভারতে যারা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে, পরবর্তীতে তারাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করেছে। কিন্তু পাকিস্তানে যারা সংগ্রাম করে স্বাধীনতা এনেছে, তার বেশিরভাগই জেল খেটেছে, নির্যাতিত হয়েছে। আর যারা বিদেশি প্রভুদের সহযোগিতা করেছে- যেমন সামরিক, বেসামরিক আমলা; তারাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে এবং হচ্ছে। ভারত পাকিস্তান দুটি দেশের মধ্যে এটাই পার্থক্য। আর এজন্যই দুদেশের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা।’

    যতোই সময় গড়াচ্ছিলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও শেখ মুজিবের মুক্তির ব্যাপারে ততোই কথা বলছিলেন গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এই নেত্রী। ২৭ নভেম্বর দিল্লিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বিষয়ে এখন একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌঁছানোর সময় রয়েছে। পাকিস্তান ইচ্ছা করলে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধানে আসতে পারে।’

    কিন্তু ৩ ডিসেম্বর ভারতকে আক্রমণ করে বসে পাকিস্তান। এরপর পাল্টা আঘাতে যায় ভারত। ডিসেম্বরের ৬ তারিখে ভারতের লোকসভায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এসময় ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘অনেক বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশের জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রামরত বাংলাদেশের জনগণ এবং পশ্চিম পাকিস্তানি হামলা প্রতিহত করার জন্য জীবনপণ সংগ্রামরত ভারতের জনগণ আজ একই লক্ষ্যে ও একই পথের পথিক।’

    বাংলাদেশের স্বাধীনতার পাশাপাশি শেখ মুজিবের মুক্তির ব্যাপারেও সমানভাবে সোচ্চার ছিলেন তিনি। তাই ১০ ডিসেম্বর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রীমতি গান্ধী বলেছেন, ‘ভারত তখনই পুরোপুরি বিজয়ী হবে, যখন বাংলাদেশ ও তার নেতারা মুক্ত হবে। মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে সরকার গঠন করবে। এককোটি শরণার্থী ভারত থেকে স্বাধীন সার্বভৌম স্বদেশে ফিরে যাবে।’ সেই দিনটি খুব দ্রুতই অর্জিত হয়। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের সামনে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেনি পাকিস্তানি জান্তারা।

    ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকালে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের পর বেলা সাড়ে ৫টায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিজয়ের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশে শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। ঢাকা এখন একটি স্বাধীন দেশের মুক্ত রাজধানী। এই সংসদ ও সমগ্র জাতি এই ঐতিহাসিক ঘটনায় আনন্দিত। আমরা বাংলাদেশের জনগণকে তাদের এই বিজয়লগ্নে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বীরত্ব ও আত্মত্যাগের জন্যে আমরা মুক্তিবাহিনীর সাহসী তরুণদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাদের স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী এবং সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে তাদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। আমরা তাদের জন্য গর্বিত। যারা জীবন দিয়েছেন ভারত তাদের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। আমরা আশা করি ও বিশ্বাস করি যে, এই নতুন দেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তার জনগণের মধ্যে যথাযোগ্য স্থান গ্রহণ করে বাংলাদেশকে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাবেন।’

    পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান কারাগার থেকে ছাড়া পান বঙ্গবন্ধু। এরপর লন্ডনে যাত্রাবিরতি শেষে ১০ ডিসেম্বর ভারত হয়ে বাংলাদেশের ফেরেন। ভারতে ইন্দিরা গান্ধীসহ তার সরকার অভ্যর্থনা জানায় তাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাশে থাকার জন্য ভারতের জনগণ ও ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধু। সেই সঙ্গে একজন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সৈন্যদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি নেন। এরপর নতুন করে দেশ গড়ার প্রত্যয় বুকে নিয়ে জাতির জনক পা রাখেন বাংলাদেশের মাটিতে। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই তার কথা মতো মাত্র দুই মাসের মধ্যে সব ভারতীয় সেনাকে ফিরিয়ে নেন ইন্দিরা গান্ধী। যুদ্ধে জয়ের কোনো অংশীদার বিশ্বের ইতিহাসে কখনোই এত দ্রুত জয় করা ভূমি ছেড়ে চলে যায়নি। এটি সম্ভব হয়েছে শুধু বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্ব এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি ইন্দিরা গান্ধীর আস্থা ও মুগ্ধতার কারণেই।

    তন্ময় আহমেদ ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৪:১৩

    Source: Channel I Online Link

    No tags.

    Zakir Hossain

    More posts by Zakir Hossain

    Leave a Comment

    Cancel reply

    You must be logged in to post a comment.

    NextPrevious

    বিভাগ

    • অডিও ও ভিডিও
      • ডকুমেন্টারি ও সংবাদ
      • বক্তব্য/ভাষণ/সাক্ষাৎকার
    • বই
    • বঙ্গবন্ধু
      • কারাজীবন
      • জন্ম ও বেড়ে ওঠা
      • পরিবার
        • এম এ ওয়াজেদ মিয়া
        • টিউলিপ সিদ্দিক
        • বঙ্গ মাতা
        • শেখ কামাল
        • শেখ জামাল
        • শেখ রাসেল
        • শেখ রেহানা
        • শেখ হাসিনা
        • সজীব ওয়াজেদ জয়
        • সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
      • বঙ্গবন্ধু বিরোধী ষড়যন্ত্র
      • বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড
      • বঙ্গবন্ধুর অর্জন ও স্বীকৃতি
      • বঙ্গবন্ধুর শাসনামল
        • অর্থনীতি
        • কৃষিক্ষেত্র
        • নবরাষ্ট্র পুনর্গঠন সংগ্রাম
        • পররাষ্ট্র নীতি
        • বাকশাল
        • বিবিধ
        • সামরিক ক্ষেত্র
        • স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
      • বাঙ্গালির মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু
        • ১৯৭১
          • ৭ মার্চের ভাষণ
          • উত্তাল মার্চ
          • পাকিস্তান কারাগারে বঙ্গবন্ধু
          • মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু
          • স্বাধীনতার ঘোষণা
        • ৬ দফা আন্দোলন
        • ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান
        • ৭০ এর গণনির্বাচন
        • আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
        • ভাষা আন্দোলন
      • বিষয়ভিত্তিক
        • বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন
        • শিশুবন্ধু বঙ্গবন্ধু
      • ভাষণ
    • বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে প্রকাশনা
      • উপসম্পাদকীয়
      • কবিতা ও গান
      • রচনা ও নিবন্ধ
      • সংবাদ
    • বহুমাতৃকতায় বঙ্গবন্ধু
    • বিবিধ
    • বিশেষ
      • বঙ্গবন্ধুর দর্শন

    সাম্প্রতিক

    • 20 February, 2021
      0

      Days before his death, Pranab Mukherjee penned an article recalling fond memories of Sheikh Mujib

    • 20 February, 2021
      0

      The unfinished journey of Sheikh Mujib

    • 20 February, 2021
      0

      Bangabandhu the statesman

    • 20 February, 2021
      0

      BOOK REVIEW: Bangabandhu Sheikh Mujib: A leader etched on people’s heart

    © এই পোর্টালে প্রকাশিত কন্টেন্ট সমূহের স্বত্ব সংশ্লিষ্ট লেখক বা প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত। 📧 BangaBandhuOnline@gmail.com
    • মূল পাতা
    • বঙ্গবন্ধু
      • এক নজরে
      • জন্ম ও বেড়ে ওঠা
      • মুক্তি সংগ্রামে
        • ভাষা আন্দোলন
        • ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬
        • আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ১৯৬৮
        • ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান
        • ১৯৭০ এর গণনির্বাচন
        • ১৯৭১
          • জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি
          • ২রা মার্চ
          • ৭ মার্চের ভাষণ
          • উত্তাল মার্চ
          • ২৫শে মার্চ
          • স্বাধীনতার ঘোষণা
          • মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু
          • পাকিস্তান কারাগারে বঙ্গবন্ধু
      • হত্যাকাণ্ড
      • শাসনামল
        • অর্থনীতি
        • কৃষিক্ষেত্র
        • স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
        • নবরাষ্ট্র পুনর্গঠন
        • অর্থনীতি
        • পররাষ্ট্র নীতি
        • সামরিক ক্ষেত্র
        • বাকশাল
        • বিবিধ
      • পরিবার
        • বঙ্গ মাতা
        • শেখ হাসিনা
        • শেখ কামাল
        • শেখ জামাল
        • শেখ রেহানা
        • শেখ রাসেল
        • এম এ ওয়াজেদ মিয়া
        • সজীব ওয়াজেদ জয়
        • সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
        • রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিক
        • টিউলিপ সিদ্দিক
      • অর্জন ও স্বীকৃতি
      • ভাষণ
      • রচনা সমূহ
      • বঙ্গবন্ধু বিরোধী ষড়যন্ত্র
      • বিষয়ভিত্তিক
        • শিশুবন্ধু বঙ্গবন্ধু
        • বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন
    • প্রকাশনা
      • গ্রন্থাবলি
      • রচনা ও নিবন্ধ
      • সংবাদ
      • উপসম্পাদকীয়
      • কবিতা ও গান
    • অডিও ও ভিডিও
      • বক্তব্য/ভাষণ/সাক্ষাৎকার
      • ডকুমেন্টারি ও সংবাদ
    • স্থির চিত্র
    • বিবিধ
    • বিশেষ
    • সামাজিক গণমাধ্যম
      • ফেসবুক
      • ইউটিউব
      • টুঁইটার
    Bangabandhu Online Archive