ভাষা আন্দোলনই বঙ্গবন্ধুর টার্নিং পয়েন্ট

সম্পাদনা/লেখক: Zakir Hossain

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন ১৯৩৯ সালে শুরু হলেও ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন-পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে তিনি একজন প্রখ্যাত তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮-এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ প্রতিটি স্বাধিকার আন্দোলনের নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক টার্নিং পয়েন্ট।

কথা ফুটতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মানবিক এবং অধিকার বোধের প্রখরতা ধরা পড়ে। স্কুলজীবনেই তিনি সহপাঠীদের প্রতি ছিলেন উদার এবং বন্ধুবৎসল। নেতৃত্বগুণ ধরা পড়ে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশোনার করার সময়েই।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও তার পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন, পশ্চিম পাকিস্তানের দুঃশাসনের কাছে বাঙালির অধিকার লুণ্ঠিত হবে।

১৯৩৯ সাল থেকে শুরু হয় তার রাজনৈতিক জীবন। শৈশবের ১২-১৩ বছর বাদে ৫৫ বছরের পুরো জীবনই বঙ্গবন্ধু দেশকে স্বাধীন করতে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রয়াত ভাষাসৈনিক গাজীউল হক স্মৃতিচারণে লিখেছেন, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তুমি ঘর সামলিয়ে রেখো। আমাদের স্বাধীন হতে হবে। আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের গ্রেপ্তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের এক টার্নিং পয়েন্ট। ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ভাষাবিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। ‘সম্মেলনের কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করেন সেই সময়ের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান’। ১১ মার্চের হরতাল সফল করতে ১৯৪৮ সালের ১ মার্চ প্রচারমাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছিল। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন অধ্যাপক আবুল কাসেম (তমদ্দুন মজলিস সম্পাদক), শেখ মুজিবুর রহমান (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ কাউন্সিলের সদস্য), নঈমুদ্দীন আহমদ (পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বায়ক) এবং আবদুর রহমান চৌধুরী (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যুব সম্মেলনে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের নেতা) জাতীয় রাজনীতি ও রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের ইতিহাসে এ বিবৃতির গুরুত্ব অপরিসীম।

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য অবিস্মরণীয় দিন। সেদিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয় এবং যা ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তথা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম সফল হরতাল। এই হরতালে শেখ মুজিব নেতৃত্ব দেন এবং পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেপ্তার হন। ভাষাসৈনিক অলি আহাদ তার ‘জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ১৯৭৫’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার নিমিত্তে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ হতে ১০ মার্চ ঢাকায় আসেন।’ ১১ মার্চের হরতাল কর্মসূচিতে যুবক শেখ মুজিব এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, এ হরতাল ও কর্মসূচি তার জীবনের গতিধারা নতুনভাবে প্রবাহিত করে। এজন্য ১১ মার্চকে রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের টার্নিং পয়েন্ট বলে ধরা হয়।

জাতির জনকের রাজনৈতিক জীবনের শুরু এবং বিশেষ সময়গুলো উল্লেখ করা হলো।

১৯৩৯ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল পরিদর্শনে গেলে কিশোর মুজিব তাদের দৃষ্টি কাড়েন। তখন ওই স্কুলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ত, তা সারানোর জন্য ও ছাত্রাবাসের দাবি স্কুলছাত্রদের পক্ষ থেকে তুলে ধরেন। তখন থেকেই মুজিবের মনে রাজনীতি এবং দেশের জন্য কাজ করার চিন্তা দানা বাঁধে।

১৯৪০ সাল শেখ মুজিব নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন এবং এক বছরের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাকে গোপালগঞ্জ মুসলিম ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারি নিযুক্ত করা হয়। ১৯৪২ সালে এসএসসি পাস করে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট ক্লাসে ভর্তি হন এবং বেকার হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হয়। ওই বছরই পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।

১৯৪৩ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।

১৯৪৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলে কলকাতায় দাঙ্গা প্রতিরোধ তৎপরতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ৪ জানুয়ারি মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ভাষা প্রসঙ্গে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে সংগঠিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের এক বৈঠক হয়। ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাব ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদ বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিম লীগের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে। ১১ মার্চ বাংলা ভাষার দাবিতে ধর্মঘট পালনকালে বঙ্গবন্ধু সহকর্মীদের সঙ্গে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন। পরে মুসলিম লীগ সরকার ছাত্রদের আন্দোলনের চাপে বঙ্গবন্ধুসহ গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্রনেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। বঙ্গবন্ধু ১৫ মার্চ মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় বঙ্গবন্ধু সভাপতিত্ব করেন। সভায় পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশি হামলার প্রতিবাদে সভা থেকে বঙ্গবন্ধু ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানান। ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৪৯ সালে ২১ জানুয়ারি শেখ মুজিব কারাগার থেকে মুক্তি পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি-দাওয়া আদালতের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান। কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে তাকে জরিমানা করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন। ১৯ এপ্রিল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করার কারণে গ্রেপ্তার হন। ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু এই দলের যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু’। এর প্রতিবাদে বন্দি থাকা অবস্থায় ২১ ফেব্রুয়ারিকে রাজবন্দি মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসেবে পালন করার জন্য বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এ দাবিতে জেলখানায় অনশন শুরু করেন। একটানা ১৭ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন। পরে তাকে ঢাকা জেলখানা থেকে ফরিদপুর জেলে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেল থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন।

১৯৫৩ সালে ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে তিনি দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পাকিস্তান গণপরিষদের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করার লক্ষ্যে মওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক ও শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মধ্যে ঐক্যের চেষ্টা হয়। এ লক্ষ্যে ১৪ নভেম্বর দলের বিশেষ কাউন্সিল ডাকা হয় এবং এতে যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।

১৯৫৪ সালে ১০ মার্চ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট লাভ করে ২২৩ আসন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ১৫ মে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ৩০ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। ৩০ মে বঙ্গবন্ধু করাচি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং গ্রেপ্তার হন। ২৩ ডিসেম্বর তিনি মুক্তিলাভ করেন।

১৯৫৫ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করা হয়।

১৯৫৬ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খসড়া শাসনতন্ত্রে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনে বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির দাবি জানান। ১৪ জুলাই আওয়ামী লীগের সভায় প্রশাসনে সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিত্বের বিরোধিতা করে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনেন বঙ্গবন্ধু। ৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে খাদ্যের দাবিতে ভুখা মিছিল বের করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৫৮ সালে ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীপ্রধান মেজর জেনারেল আইয়ুুব খান সামরিক শাসন জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। ১১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং একের পর এক মিথ্যা মামলার হয়রানির পর প্রায় ১৪ মাস জেলখানায় থাকার পর তাকে মুক্তি দিয়ে আবার জেলগেটেই গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৬১ সালে ৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট করে তিনি মুক্তিলাভ করেন।

১৯৬২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে জননিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। ২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন বঙ্গবন্ধু মুক্তিলাভ করেন। ২৫ জুন বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতারা আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে যৌথ বিবৃতি দেন। ৫ জুলাই পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু আইয়ুব সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। ২৪ জুলাই পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু আইয়ুুব সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু লাহোর যান, এখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় মোর্চা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠিত হয়।

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। এ সভায় দেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটের মাধ্যমে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় সংবলিত প্রস্তাব গৃহীত হয়। ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন আগে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের অভিযোগে মামলা করা হয়। এক বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন।

১৯৬৬ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলগুলোর জাতীয় সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন। প্রস্তাবিত ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি সনদ।

১৯৬৮ সালে ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। ১৭ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে পুনরায় জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে আটক রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত আসামিদের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের বিচারকার্য শুরু হয়।

১৯৬৯ সালে ৫ জানুয়ারি ছয় দফাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু করে। এ আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়।

১৯৭০ সালে ৭ ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ৩০৫টি আসন লাভ করে। ১৯৭১ সালে দীর্ঘদিনের স্বাধিকার আন্দোলন শেষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।

Link: DeshRupantor |  ১৭ মার্চ, ২০২০

আরও পড়ুন