আজ ২ নভেম্বর ৪৮তম জাতীয় সমবায় দিবস। বাংলাদেশের সমবায়ীদের একটি পতাকাতলে এনে তাদের উৎসাহ প্রদান, উন্নয়নের ধারায় সমবায় কার্যক্রম পরিচালনা এবং সমবায়ের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তথা স্বয়ম্ভরতা অর্জনের মহান ব্রত নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে জাতীয় সমবায় দিবস। এ কারণে বাংলাদেশের তাবৎ সমবায়ীদের কাছে দিবসটি সবিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে : বঙ্গবন্ধুর দর্শন, সমবায়ে উন্নয়ন। আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিষয়টি সময়োপযোগী-চাহিদা উপযোগী এবং ব্যাপক মানুষের কল্যাণ, সর্বোপরি দেশের জনগণের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নিরিখে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়একটি প্রত্যয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে দৃপ্তকণ্ঠে গভীর আবেগে বলেছিলেন, ‘আমি বাঙালি জাতিকে ভিক্ষুকের জাতি হিসাবে দেখতে চাই না। আমি চাই তারা আত্মমর্যাদাশীল উন্নত জাতি হিসাবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ জন্য দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে সোনার বাংলা গড়তে হবে।’ ইতিহাসের মহানায়কের এ কালজয়ী ভাষণ কেবল কোনো আবেগতাড়িত অভিব্যক্তি নয়; এটি তাঁর আজন্মলালিত এক গভীর মানবিক সংগ্রামী দর্শনও বটে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, সমবায় একটি আন্দোলন ও চেতনার নাম, একটি আদর্শ ও সংগ্রামের নাম। ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত হলেও সমবায় সমিতি কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নয়। সমিতিতে শেয়ার ক্রয় করে মুনাফা অর্জন করা সমবায়ীদের প্রধান লক্ষ্য নয়। সাতটি মৌলিক নীতিমালার ওপর নির্ভর করে সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ, উন্মুক্ত সদস্য হওয়ার সুযোগ, শিক্ষা প্রশিক্ষণ, তথ্য বিনিময় এবং সমাজকে সম্পৃক্ত করে উন্নয়ন হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু সমবায়কে সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করতেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, দেশের প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। তিনি গণমুখী সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সমবায় নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন যে কত গভীরে প্রোথিত ছিল এবং কত সুদূরপ্রসারিত চিন্তাসমৃদ্ধ, তা লক্ষ্য করা যায় ১৯৭২ সালের ৩০ জুন বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে প্রদত্ত তাঁর বক্তব্যের মধ্যে। সেই ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা সমবায়ের পথ সমাজতন্ত্রের পথ, গণতন্ত্রের পথ। সমবায়ের মাধ্যমে গরিব কৃষকরা যৌথভাবে উৎপাদন যন্ত্রের মালিকানা লাভ করবে।’ আর বঙ্গবন্ধুকন্যার হাতে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন জয়রথের উন্নয়নযাত্রা প্রত্যক্ষ করে দেশের আপামর জনসাধারণ আশ্বস্ত হতে পারছে এ ভেবে যে, তিনিও বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর বজ্রকঠিন শপথে বলীয়ান হয়ে তাঁর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন; একের পর এক জনকল্যাণমুখী সাফল্যে আমরা এগিয়ে চলেছি তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে। যার সারৎসার আমরা খুঁজে পাই তাঁর অনেক ভাষণে।
বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বস্তুত বঙ্গবন্ধুর সমবায় বাংলারই প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধুর সামগ্রিক দর্শনের ভিত্তি ছিল- আপামর জনমানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করা এবং দারিদ্র্য বিমোচনসহ সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন। উন্নয়ন দর্শনে তাই তিনি প্রাধান্য দিয়েছিলেন সমবায়কে। আর সেটি আজ তাঁরই সুযোগ্যকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিব্যক্তি ও কর্মকুশলতায় জনমনে সীমাহীন প্রভাব ফেলছে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন আমাদের সবার মানসিকতার পরিবর্তন, ইতিবাচক চিন্তার বিকাশ, উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োগ। বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনাকে পাথেয় করে ইতিবাচক মানসিকতায় ঋদ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বহুবিধ সমবায়বান্ধব কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে আসুন, আমরা সবাই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নত স্তরে গড়ে তুলি বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা।
সমীর কুমার বিশ্বাস ০২ নভেম্বর ২০১৯ লিংক