লেখক গ্রন্থটিকে অপ্রয়োজনীয় অলঙ্কারে ভারাক্রান্ত না করায় একদিকে এটি পুনরাবৃত্তিহীন প্রামাণ্য দলিল হিসেবে দাঁড়িয়েছে, অন্যদিকে কলেবরে তুলনামূলক ছোট হওয়ায় হয়েছে সহজপাঠ্য। মোট চারটি অধ্যায়ে বিষয়বস্তুকে সাজানো হয়েছে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে। প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঠিক আগে আগে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনের সময়কার অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন। পরের দুটি অধ্যায়ে সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশ পুনর্গঠন কালে বঙ্গবন্ধু যে চ্যালেঞ্জগুলো যেভাবে মোকাবিলা করেছেন, যাদের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছেন, যাদের অসহযোগিতায় বাধাগ্রস্ত হয়েছেন- এমন বিষয়গুলো নিজ বয়ানে তুলে ধরেছেন লেখক। আর শেষ অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক অর্থনীতির রাজনীতি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন, যা অনেক পাঠকের কাছেই বিশেষ আগ্রহের বিষয়। কারণ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের এ দিকটি তুলনামূলক কম আলোচিত।
‘বাংলাদেশের জন্ম : রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পটভূমি’ শিরোনামে প্রথম অধ্যায়ে যে বাস্তবতায় পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন হওয়াটা অবশ্যম্ভাবী ছিল তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণী দিয়ে শুরু করেছেন নুরুল ইসলাম। এ বিষয়ে বিস্তর লেখাপত্র রয়েছে, লেখক নিজেও এ নিয়ে বড় কলেবরে লিখেছেন। কিন্তু এ গ্রন্থে যে প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে জাতির অদ্বিতীয় ত্রাতা হয়ে ওঠেন তার বর্ণনা করতে গিয়ে অল্প পরিসরের মধ্যেই পাকিস্তানের দুই অংশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি নিখুঁত চিত্র হাজির করেছেন তিনি। ‘ছয় দফা নিছক কেবল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল না’- এমন কথা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কীভাবে ছয় দফার দাবিগুলো নিছক স্বায়ত্তশাসনের দাবির চেয়ে মৌলিকভাবে আলাদা ছিল তা নিয়ে মূলধারায় আলোচনা-পর্যালোচনা কমই দেখা যায়। সেই শূন্যতা উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পূরণ করতে পারে এ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়টি। ছয় দফা কর্মসূচি কীভাবে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারব্যববস্থার দুর্বলতা বাড়িয়ে দিয়েছিল তা পাঠককে সহজভাবে বোঝাতে সমর্থ হয়েছেন অধ্যাপক ইসলাম।
ছয় দফা যে বঙ্গবন্ধুর একান্ত নিজস্ব চিন্তাজাত তা এ অধ্যায়ে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। তিনি লিখেছেন- ‘ছয় দফা দাবির খসড়া কে লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তা আমার প্রত্যক্ষভাবে জানা নেই। তবে বঙ্গবন্ধু নিজেই ছয় দফার মূল সূত্রগুলোর খসড়া তৈরি করেছেন, এমনটাই সবাই বিশ্বাস করতেন’ (পৃষ্ঠা ১৮ দ্রষ্টব্য)। ছয় দফা বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম যুক্ত হয়েছিলেন আরো অনেক পরে। তাঁর নিজের কথায়- ‘১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার পর আমি ছয় দফা কর্মসূচির পক্ষে কাজ করতে শুরু করি’ (পৃষ্ঠা ১৯ দ্রষ্টব্য)। পঞ্চাশের দশক থেকেই পাকিস্তানের দুই অংশের বৈষম্য নিয়ে অধ্যাপক ইসলাম গবেষণা ও বিভিন্ন কমিটি/কমিশনে কাজ করেছিলেন। সম্ভবত তৎকালীন পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের গভর্নর এম রশিদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ইসলামের এসব কাজের কথা জানতে পেরেছিলেন। ১৯৬৯-এর শুরুর দিকে জনাব রশিদ এবং অধ্যাপক ইসলামের বন্ধু একজন অবাঙালি ব্যবসায়ীর ঢাকার বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ওই সাক্ষাতের বর্ণনায় তিনি লিখেছেন- ‘সাক্ষাৎকালে বঙ্গবন্ধু আমাকে বোঝালেন যে তিনি বেশ কিছু বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন অনুভব করছেন, যাঁরা তাঁর স্বাধিকারের দাবি ও ছয় দফার প্রতিটি দফাকে জোরালো বিস্তারিতভাবে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করবেন এবং এজন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করবেন। তাঁর ধারণা যে আগামী দিনে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে কঠিন বোঝাপড়া করতে হবে। তিনি আরো বলেন যে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক নীতিমালা রচনা ও সেসবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দান করার জন্য তাঁর যে টিম রয়েছে, আমি যেন একজন সদস্য হিসেবে তাতে যোগ দিই। আমি তাঁর আহ্বানে সাধ্যমতো সহযোগিতার আশ্বাস দেই’ (পৃষ্ঠা ২০-২১ দ্রষ্টব্য)।
এ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছয় দফার আলোকে খসড়া সংবিধান রচনার কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সময়। এর মাঝেই শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ। ২৫ মার্চের পর অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ঢাকা থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এই দলিলের মুখবন্ধে বঙ্গবন্ধু লিখেছিলেন- ‘এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ভবিষ্যৎ বিকাশের দিকনির্দেশনা এবং উন্নয়ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে স্বল্প সময়ে প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতি গঠনে আমাদের সবাইকে একাগ্র চিত্তে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে যেমনটি মুক্তিযুদ্ধে আমার সাহস ও উদ্দীপনাসহ করেছিলাম’। বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক সমর্থনে অধ্যাপক ইসলাম নানা প্রতিক‚লতা অতিক্রম করে পরিকল্পনা কমিশন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ওই সময়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অনেক বিদেশ সফরে গিয়েছেন এবং এই গ্রন্থে ঐসব সফরের অনেক স্মৃতিও স্থান পেয়েছে।
পাকিস্তানি অপশক্তির থাবা থেকে অনেক ত্যাগের পর মুক্তি মিললেও নিজেদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন মোটেও সহজ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিকে মোকাবিলা করতে হয়েছে আরো অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ। ওইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বঙ্গবন্ধু কি কি কৌশল অবলম্বন করেছেন, বৈরী প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিক্রমা নিয়ে তিনি কীভাবে ভেবেছেন সেগুলো নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এ গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে। তাই অধ্যায়টির শিরোনাম- ‘রাষ্ট্র গঠনে বহুবিধ সমস্যা এবং তার সমাধান প্রচেষ্টা’। এ অধ্যায়ের আলোচনায় বোধগম্য কারণেই বড় জায়গাজুড়ে রয়েছে পরিকল্পনা কমিশন গঠন এবং কমিশনের তৈরি প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের দেয়া ২১ দফা, ১৯৬৯ এ ১১ দফা এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনী ইশতেহারে বাঙালির ভাগ্যোন্নয়নের যে আর্থসামাজিক উদ্দেশ্য এবং ভবিষ্যতের বৃহৎ কাঠামোর যে রূপরেখা দেয়া হয়েছিল সেগুলোর পরিকল্পিত এবং সুসমন্বিত বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধু পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর বহুল আলোচিত জাতীয়করণ নীতি নিয়েও একটি গভীরতর বিশ্লেষণ পাওয়া যাবে এ অধ্যায়ে। ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণের যে ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি ছিল তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মতামত এ নীতির পক্ষেই ছিল। তবে বঙ্গবন্ধু ব্যক্তি খাতের বিরোধী ছিলেন না কোনোক্রমেই। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ধীরে ধীরে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
দ্বিতীয় অধ্যায়েই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে আমলাতান্ত্রিক চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবিলায় পরিকল্পনা কমিশনকে বঙ্গবন্ধু সহায়তার যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায় বঙ্গবন্ধু নতুন দেশ গঠনে কেবল আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল না থেকে বিশেষজ্ঞ মতামতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথেই বিবেচনা করেছেন। তার সুফলও পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু বৈরী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রাস্ফীতি, উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সর্বোপরি দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো অসংখ্য প্রতিক‚লতা বঙ্গবন্ধুর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। তাই বাস্তবতার নিরিখে বঙ্গবন্ধুকে স্বল্পমেয়াদি সমাধানের পথ বেছে নিতে বাধ্য করেছিল বলে মনে করেন লেখক।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তে খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমানের যুক্ততার বিষয়টিও দ্বিতীয় অধ্যায়ে খুব মুন্সিয়ানার সঙ্গে লেখক তুলে এনেছেন বেশ কিছু ঘটনা পরম্পরার দিকে ইঙ্গিতের মাধ্যমে। ‘মোশতাকের ষড়যন্ত্রের কথা কি বঙ্গবন্ধু জানতেন?’ শিরোনামে লেখক কয়েকটি ঘটনা ও কথোপকথনের উল্লেখ করে লিখেছেন যে হয়তো বঙ্গবন্ধু মোশতাকের দুরভিসন্ধির বিষয়টি জানতেন। লেখকের নিজের কথায়, ‘আমার ধারণা, তাঁরা এক ধরনের সংঘাতের মধ্যে ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সম্ভবত বিভিন্নভাবে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে মোশতাক যে যে ষড়যন্ত্র বা দুরভিসন্ধির সঙ্গেই জড়িত থাকুক না কেন, তাঁর মতো ভিতু ও দুর্বল চরিত্রের লোকের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর ক্ষমতা ও দক্ষতার কারণে কোনো রকম ষড়যন্ত্র করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই’ (পৃষ্ঠা ৫৪ দ্রষ্টব্য)। পরবর্তীতে আমরা দেখতে পেয়েছি যে বিশ্বাসঘাতক মোশতাক বিশাল হৃদয়ের মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর ঔদার্য্যরে সুযোগ নিতে কোনো কার্পণ্যই করেননি। একইভাবে ‘দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির ব্যাপারে জিয়াউর রহমানের গভীর আগ্রহ’ লক্ষ্য করে লেখক বেশ বিস্মিত হয়েছিলেন। বেশ আগে থেকেই তিনি ‘হোমওয়ার্ক’ করছিলেন। তাছাড়া জাতীয় বেতন কমিশনের খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবেও অনেকের সাথে কথা বলার সুযোগ পান জিয়াউর রহমান। সুযোগ পেলেই তিনি বলতেন যে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে অচিরেই ‘স্থিতিশীলতা’ ফিরে আসবে। পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করেও তিনি একই মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। তখন লেখকের মনে হয়েছিল, ‘শিগগিরই যে একটি পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে, সে সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন’ (পৃষ্ঠা ৬১ দ্রষ্টব্য)। পঁচাত্তরের আগস্ট পরবর্তী সময়ে মোশতাক ও জিয়ার আচরণ এবং ক্ষমতারোহনই প্রমাণ করে তারা এই ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলেন। তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের সংশ্লিষ্টতার কথাও এখানে উঠে এসেছে। পরবর্তীতে লরেন্স লিফসুলৎজ স্পষ্টই বলেছেন যে একটি অতিক্ষমতাধর রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট হয়ে জিয়াউর রহমানের ছায়াতলেই ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে।
শেষ অধ্যায়ের শিরোনাম ‘বঙ্গবন্ধু ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতির রাজনীতি’। এ অধ্যায়টি সাধারণ পাঠকদের মতোই বঙ্গবন্ধু বিষয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী গবেষকদের জন্যও অবশ্যপাঠ্য বলে মনে হয়েছে। কারণ বৈরী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা এবং আরব দেশগুলোর বৈরী মনোভাব মোকাবিলা করে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেতে বঙ্গবন্ধুকে যে আসাধারণ নিষ্ঠা ও ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়েছে- তা সম্পর্কে সংক্ষেপে একটি সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে এখানে। বৈরী শক্তিগুলোকে নিজ দেশের অনুক‚লে আনার প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু কিন্তু কোনো আপস করেননি। পাকিস্তানের ঋণের দায় নিয়ে দাতা গোষ্ঠীগুলোর সাথে দরকষাকষির অভিজ্ঞতার বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়।
গ্রন্থের শেষ অধ্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু : পেছন ফিরে দেখা’ অংশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের দূরদৃষ্টি, অসাধারণ স্মৃতিশক্তি এবং বিদেশি নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি যে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ রেখে গেছেন তা উঠে এসেছে (পৃষ্ঠা ৯৩ দ্রষ্টব্য)। প্রচণ্ড প্রতিরোধ মোকাবিলা করেই যে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে একটি স্বাধীন দেশ ও একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেদিকটি ছাড়াও দেশ পরিচালনাকালে নানা পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার যে দক্ষতা ও বিচক্ষণতা তিনি দেখিয়েছেন সেগুলো উল্লেখ করেই গ্রন্থটি শেষ করেছেন লেখক। নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে গ্রন্থটি একটি উপযুক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি।