ছোটবুকে নিয়ে অনেক অনেক ভালো থেকো। আমাদের জন্য চিন্তা করো না। আমরা ঠিক ঠিক বেঁচে আছি, বাংলাদেশের মানুষের হৃদকম্পে।
বুবু,আজ বাসায় কি আজ পোলাও-রোস্ট রান্না হবে? আমার জন্মদিন তো, কী ভুলে গেলে? ওই যে আমরা যখন সবাই একসাথে থাকতাম। তখন মা এই দিনে স্পেশাল রান্না করতেন। দুপুরে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকতাম। বাবা ঘরে ঢুকলে চুরুটের ঘ্রাণের সাথে পোলাও-রোস্টের ঘ্রাণ মিলেমিশে একাকার হতো। কখন একসাথে খেতে বসবো, দৌড়ে যেতাম তাই। তাড়া দিতে দিতে খাবার ঠান্ডা হয়ে যেত। মনে করতে পারো বুবু?
বত্রিশ নম্বরের বাড়িটা একদম খা খা করে। এখন একটুও হইচই নেই। আমার খেলার সাথীরা নেই। অথচ এমন দিনগুলোতে আমরা সবাই মিলে কত না খেলায় মেতে থাকতাম। আমার আবারও খেলতে ইচ্ছে করে। তোমাদের সাথে লুকোচুরি খেলা। ছোট্ট সবুজ লনে গড়াগড়ি করতে মন চায়। বাবার কোলের পাশে বসে রাজ্যের গল্প, বহু বছর শুনি না। ভাইয়াদের আড্ডায় উঁকি দেয়া হয় না। আমার মতন তুমি আর ছোটবু একা হয়ে গেছো। অনেক একা।
ঐ যে সেই দিন। অন্ধকার নেমে এসেছিল যেদিন। অসহায় ভয়ে কুঁকড়ে ছিলাম বহুক্ষণ। মায়ের কাছে যাব, বলেছিলাম আমি। ওরা যেতে দেয়নি আমায়। ছোট্ট বুকটা ভেঙে দিয়েছিল। অনেক রক্ত বের হচ্ছিল। শুধু মাকে খুঁজছিলাম, কোথাও পাচ্ছিলাম না দেখতে। অনেক বেশি ঠান্ডা লাগছিল। মা আমায় বুকে জড়িয়ে ধরবে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। ব্যাথা কমে যাবে, ঠান্ডা কমে যাবে। ছোপ ছোপ রক্তে ভেজা জামা দেখে বকবে কিছুক্ষণ। তারপর ধুয়ে মুছে ঠিক আদর করে সব বদলে দদেবে।
ভাগ্যিস তুমি আর ছোটবু ছিলে না সেদিন। ভাগ্যিস তোমাদের কিছু হয়নি। এত ব্যথা কী করে সহ্য করতে বলো? না, বেশিক্ষণ সহ্য করতে হয়নি আমার। খুব দ্রুত চারিদিক শীতল থমথমে ঘন কুয়াশায় ঢেকে এসেছিল। তার মাঝেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম, চুপ করে। মাকে আর দেখা হয়নি আমার।
তারপরও ভালো থেকো বুবু। ছোটবুকে নিয়ে অনেক অনেক ভালো থেকো। আমাদের জন্য চিন্তা করো না। আমরা ঠিক ঠিক বেঁচে আছি, বাংলাদেশের মানুষের হৃদকম্পে। তোমার রাসেল এখনও খেলে বেড়ায় অনন্তরেখার দেশে। আমার জন্মদিনের কেকটা একটু বেশি করে খেও। তোমাকে আর ছোটবুকে ভাগটা দিয়ে দিলাম।
ভালবাসা আর আদর তোমাদের ছোট্ট ভাইটি শেখ রাসেল
শাওন মাহমুদ ১৮ অক্টোবর ২০২০ লিংক