শেখ রাসেল স্মৃতিসুধায় পূর্ণ তুমি

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

আজ ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের এই দিন যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করেছিল, তাকেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে নির্মম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে হয়েছিল। মায়ের কাছে যেতে চাওয়ার আগে ভয়ে যখন কেঁদে উঠে বলেছিল ‘আমাকে ওরা মেরে ফেলবে না তো’, তখনো ওই নারকীয় ঘটনার সাক্ষী ও ৩২ নম্বর সড়কের বিখ্যাত বাড়ির গৃহকর্মীর মনে হয়নি শিশুটিকে হত্যা করতে পারবে জল্লাদরা। আর স্নেহময়ী মায়ের মৃতদেহ দেখে আর্তচিৎকারে যখন সে তাকে হাসু আপার কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেছিল, ঠিক তখনই পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে এসেছিল। দূর আকাশে জেগে থাকা শুকতারা শিশুটির ভয়ার্ত মুখ দেখে ছুটে আসতে চেয়েছিল কি? ভোরের পাখিরা কি সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল? আজ ৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে তার স্মৃতি আমাদের অন্তরে নীরবে রক্তক্ষরণ করে জেগে উঠছে বারবার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’ রচনায় লিখেছেন রাসেলের জন্ম ইতিবৃত্তÑ ‘রাসেলের জন্মের আগের মুহূর্তগুলো ছিল ভীষণ উৎকণ্ঠার। আমি, কামাল, জামাল, রেহানা ও খোকা কাকা বাসায়। বড় ফুফু ও মেজ ফুফু মার সাথে। একজন ডাক্তার এবং নার্সও এসেছেন। সময় যেন আর কাটে না। জামাল আর রেহানা কিছুক্ষণ ঘুমায় আর জেগে ওঠে। আমরাও ঘুমে ঢুলঢুলু চোখে জেগে আছি নতুন অতিথির আগমনবার্তা শোনার অপেক্ষায়। মেজ ফুফু ঘর থেকে বের হয়ে এসে খবর দিলেন আমাদের ভাই হয়েছে। খুশিতে আমরা আত্মহারা। কতক্ষণে দেখব। ফুফু বললেন, তিনি ডাকবেন। কিছুক্ষণ পর ডাক এলো। বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিলেন রাসেলকে। মাথাভরা ঘন কালো চুল। তুলতুলে নরম গাল। বেশ বড়সড় হয়েছিল রাসেল। মাথার চুল একটু ভেজা মনে হলো। আমি আমার ওড়না দিয়েই মুছতে শুরু করলাম। তার পরই এক চিরুনি নিলাম মাথার চুল আচড়াতে। মেজ ফুফু নিষেধ করলেন, মাথার চামড়া খুব নরম তাই এখনই চিরুনি চালানো যাবে না। হাতের আঙুল বুলিয়ে সিঁথি করে দিতে চেষ্টা করলাম। আমাদের পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রাসেল। অনেক বছর পর একটা ছোট বাচ্চা আমাদের ঘর আলো করে এসেছে, আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে।’

শেখ হাসিনার এই লেখা থেকে পাঠকরা জানতে পেরেছেন, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল এই দিনে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১০ বছর বয়সে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে ক্ষতবিক্ষত হয়ে অন্য সবার সঙ্গে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়ার সময় রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনৈতিক পরিবেশে বেড়ে উঠছিলেন রাসেল। তবে তার বেড়ে ওঠার প্রথম পর্ব ছিল রাজনৈতিক সংকটের কাল। তার পর যুদ্ধে জয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স সাত। পিতার জন্য তার কাতরতা ছিল। পিতা পাকিস্তানের কারাগারে। কিন্তু তার জেদ ছিল পিতার কাছে যাবেন তিনি। স্বাধীন দেশে পিতা প্রধানমন্ত্রী, তার ব্যস্ততার শেষ নেই। এরই মধ্যে রাসেল তার চিরসঙ্গী সাইকেলটি নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন। তার সাইকেলটি ছিল পরিবারের অন্য সদস্যদের মতোই প্রিয়। সেটি এখন তার স্মৃতিকে বহন করে নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে। পিতার একান্ত সান্নিধ্যে তার সময় কাটত কখনো কখনো। অবশ্য সেই মহান পিতাকে দেখার সুযোগও তার জীবনে কম হয়েছিল।

পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান হিসেবে পিতার স্নেহে ধন্য ছিলেন রাসেল। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা ‘কারাগারের রোজনামচা’তেও রাসেল জীবন্ত হয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৬৪ সালের পর যতদিন জেলের বাইরে ছিলেন, তার পুরো সময়টাই রাসেলের সঙ্গে নিবিড় মমতায় জড়িয়েছিলেন। এমনকি স্বাধীনতার পর জাপান সফরে তিনি এই ছোট পুত্রকে সঙ্গী করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাসেলই ছিলেন তার আনন্দের সঙ্গী।

শেখ রাসেলের পিতার নেতৃত্বেই আমরা মুক্ত ভূখ- পেয়েছি। আর তার হাসু আপা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তার নেতৃত্বে ‘মুজিববর্ষ’-এ রাসেলের জন্মদিন আমরা পালন করতে পারছি। রাসেলের জন্মবার্ষিকীতে শিশুদের প্রকৃত ইতিহাস জানানোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে। জানাতে হবে কারা সেই ঘাতক- যারা সপরিবারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে শেষে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। তাদের অনুসারী কারাÑ যারা আজও সক্রিয় দেশের রাজনীতিতে।

 

ড. মিল্টন বিশ্বাস ১৮ অক্টোবর ২০২০ লিংক

আরও পড়ুন