Bangabandhu Online ArchiveBangabandhu Online ArchiveBangabandhu Online ArchiveBangabandhu Online Archive
  • মূল পাতা
  • বঙ্গবন্ধু
    • এক নজরে
    • জন্ম ও বেড়ে ওঠা
    • মুক্তি সংগ্রামে
      • ভাষা আন্দোলন
      • ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬
      • আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ১৯৬৮
      • ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান
      • ১৯৭০ এর গণনির্বাচন
      • ১৯৭১
        • জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি
        • ২রা মার্চ
        • ৭ মার্চের ভাষণ
        • উত্তাল মার্চ
        • ২৫শে মার্চ
        • স্বাধীনতার ঘোষণা
        • মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু
        • পাকিস্তান কারাগারে বঙ্গবন্ধু
    • হত্যাকাণ্ড
    • শাসনামল
      • অর্থনীতি
      • কৃষিক্ষেত্র
      • স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
      • নবরাষ্ট্র পুনর্গঠন
      • অর্থনীতি
      • পররাষ্ট্র নীতি
      • সামরিক ক্ষেত্র
      • বাকশাল
      • বিবিধ
    • পরিবার
      • বঙ্গ মাতা
      • শেখ হাসিনা
      • শেখ কামাল
      • শেখ জামাল
      • শেখ রেহানা
      • শেখ রাসেল
      • এম এ ওয়াজেদ মিয়া
      • সজীব ওয়াজেদ জয়
      • সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
      • রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিক
      • টিউলিপ সিদ্দিক
    • অর্জন ও স্বীকৃতি
    • ভাষণ
    • রচনা সমূহ
    • বঙ্গবন্ধু বিরোধী ষড়যন্ত্র
    • বিষয়ভিত্তিক
      • শিশুবন্ধু বঙ্গবন্ধু
      • বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন
  • প্রকাশনা
    • গ্রন্থাবলি
    • রচনা ও নিবন্ধ
    • সংবাদ
    • উপসম্পাদকীয়
    • কবিতা ও গান
  • অডিও ও ভিডিও
    • বক্তব্য/ভাষণ/সাক্ষাৎকার
    • ডকুমেন্টারি ও সংবাদ
  • স্থির চিত্র
  • বিবিধ
  • বিশেষ
  • সামাজিক গণমাধ্যম
    • ফেসবুক
    • ইউটিউব
    • টুঁইটার

শ্রেষ্ঠ বাঙালির রোজনামচা

    Home বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে প্রকাশনা উপসম্পাদকীয় শ্রেষ্ঠ বাঙালির রোজনামচা
    NextPrevious

    শ্রেষ্ঠ বাঙালির রোজনামচা

    By আব্দুল্লাহ আল মামুন | উপসম্পাদকীয়, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে প্রকাশনা | 0 comment | 18 October, 2020 | 0

    সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের কাছ থেকে অসাম্প্রদায়িক বাংলার বড় টুকরোটিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আলাদা করে, এই বাংলাকে আবার তার হাজার বছরের ঐতিহ্যের মধ্যে পুনঃস্থাপিত করেন বঙ্গবন্ধু।

    বঙ্গবন্ধুকে বলা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কেন তিনি শ্রেষ্ঠ? হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ হওয়ার মতো বাঙালি কি আর নেই? জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখা গুণী বাঙালির সংখ্যা কম নয়। কিন্তু রাজনীতির ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টি নেই। জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি―সবকিছুর নিয়ন্তা হচ্ছে রাজনীতি। রাজনীতিই সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে। রাজনীতি তার সঠিক রাস্তায় থাকলে সবকিছুর বিকাশ ঘটে। রাজনীতি যদি তার সঠিক রাস্তা থেকে চ্যুত হয়, তবে সবকিছুই মুখ থুবড়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু এমন এক রাজনীতিবিদ, যিনি বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র।

    ভারতবর্ষে, বিশেষত বাংলায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা ব্রিটিশরা আসার আগেও ছিল, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অপচেষ্টাকারীরা কখনোই সফল হতে পারেনি। হিন্দু ও মুসলমান দুটি পক্ষ সরাসরিভাবে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিয়েছিল এবং অসমতা থাকলেও তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক-সংঘাত ছিল না। কিন্তু তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ব্রিটিশদের আসার পরে বহুবিধ কারণে হিন্দু-মুসলমানের বৈচিত্রমূলক সম্পর্ক দ্রুত বিরোধমূলক সমস্যায় রূপ নেয় এবং যে পক্ষটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল তার একটি অংশ ইংরেজদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তারপর তো এলো তথাকথিত দ্বিজাতি তত্ত্ব। এই তত্ত্ব সঙ্গে নিয়ে এলো রক্তের বন্যা। ভারতবর্ষ ভাগ হলো। বাংলার সুন্দর দেহটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দু-টুকরো করে ফেলা হলো। ভাগাভাগির মাধ্যমে এর বড় টুকরোটি নিয়ে গেল পাকিস্তান, ছোট টুকরোটি নিল ভারত। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক বাংলা কিছুতেই যৌথভাবে বসবাস করতে পারছিল না। শুরু হলো অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংঘাত। তেইশ বছর ধরে এই সংঘাত চলল। একটা সময় হাঁপিয়ে উঠল বাংলার মানুষ, সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানের কাছ থেকে বিযুক্ত হতে অস্থির হয়ে উঠল।

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্ব এখানেই যে, তিনি সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের কাছ থেকে অসাম্প্রদায়িক বাংলার বড় টুকরোটিকে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আলাদা করে, এই বাংলাকে আবার তার হাজার বছরের ঐতিহ্যের মধ্যে পুনঃস্থাপিত করে দিলেন। খেয়াল করা দরকার, ৭ মার্চের ভাষণে তিনি স্পষ্টভাবেই বলছেন, ‘বাঙালি-অবাঙালি, হিন্দু-মুসলমান সবাই আমাদের ভাই, তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।’ এটি কিন্তু কেবলই তার কথা নয়, বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যের কথা, হাজার বছরের সংস্কৃতির কথা। আরো খেয়াল করা দরকার, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা, যেটা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে এই বাংলায় বর্তমান ছিল। তার মানে বঙ্গবন্ধু এই বাংলাকে স্বাধীন করার মধ্য দিয়ে আবার তার পূর্বের জায়গায় ফেরত এনেছেন। বাঙালির জন্য এরচেয়ে বড় উপহার আর কী হতে পারে? এখানেই বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব। একারণেই তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির পিতা, বাঙালি জাতির কাণ্ডারি, বাঙালির বাতিঘর।

    মানুষ দুই প্রকারের। আত্মমুখী এবং বহির্মুখী। আত্মমুখী মানুষরা শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবেন, নিজেকে নিয়েই থাকেন। জন্ম নেন, চাকরি-বাকরি-ঘর সংসার ইত্যাদি করেন এবং যাওয়ার সময় হলে পৃথিবী থেকে চলে যান। মৃত্যুর পর আর উচ্চারিত হয় না তাদের নাম। অপরদিকে, বুহির্মুখী মানুষেরা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবেন না, তাদের সকল ভাবনা-চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু সব মানুষ। মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের সেবায় তারা নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। রাখেন বলেই মৃত্যুপরবর্তীকালেও মানুষ তাদের নাম স্মরণ করে।

    একইভাবে রাজনীতিবিদও দুই প্রকারের। এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ আছেন, যারা নিজের জাতিকে মহিমান্বিত করার জন্য রাজনীতি করেন। যেমন মহামতি আলেকজান্ডার, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, আব্রাহাম লিংকন, জর্জ ওয়াশিংটন, মাও সেতুং, মহাত্মা গান্ধি, চে গুয়েভারা, নেলসন ম্যান্ডেলা প্রমুখ। আরেক ধরনের রাজনীতিবিদ আছেন, যারা রাজনীতি করেন নিজেকে মহিমান্বিত করার জন্য, নিজের শৌর্য বৃদ্ধির জন্য। প্রথম শ্রেণীভুক্ত রাজনীতিবিদরা ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতো গোটা জাতির ভার তুলে নেন নিজের মাথায়। জাতির দুঃখকে নিজের দুঃখ এবং জাতির সুখকে নিজের সুখ মনে করেন। তারা নিজেকে নিয়ে ভাবেন না, নিজের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে ভাবেন না, পরোয়া করেন না মৃত্যুকেও। কর্মের মধ্য দিয়ে নিজের জীবনকে উন্নীত করেন এক অনন্য উচ্চতায়। শেষ পর্যন্ত এরাই ঠাঁই পান ইতিহাসের পাতায়। এরাই হয়ে ওঠেন প্রাতঃস্মরণীয়। যুগে যুগে, কালে কালে, শতাব্দীর পর শতাব্দী তাদের নাম ঘুরতে থাকে মানুষের মুখে মুখে।

    জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আদ্যোপ্রান্ত একজন বহির্মুখী মানুষ। নিজের প্রতি তার বিশেষ খেয়াল ছিল না। বাঙালি জাতির জন্য, বাংলাদেশের মানুষের সেবায় তিনি নিয়োজিত করেছিলেন নিজেকে। এবং তিনি উপরোল্লেখিত প্রথম শ্রেণিভুক্ত একজন রাজনীতিবিদ, যিনি ধারণ করেছিলেন মহৎ রাজনীতিবিদ ও মহৎ শাসকের গুণাবলি, কর্মের মধ্য দিয়ে যিনি নিজেকে উন্নীত করেছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়। সারা জীবন বাংলার মানুষের জন্যই কাজ করে গেছেন তিনি। বাংলার মানুষকে ক্ষুধা-দারিদ্র এবং পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণের যাঁতাকল থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এই দেশের মানুষের ভাগ্য বদলের জন্য রাজনীতিকে বেছে নিয়েছিলেন লড়াইয়ের মাধ্যম হিসেবে।

    ১৯৭১ সালে হুট করেই নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অভ্যুদয় ঘটেনি। বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের গোড়া থেকেই ছিল তার সম্পৃক্ততা। বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ছাত্রজীবন থেকেই তিনি রাজপথে সক্রিয় ছিলেন আন্দোলন-সংগ্রামে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দিয়ে শুরুর পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা আনা পর্যন্ত সারাজীবনের এক-চতুর্থাংশ সময় কারাগারেই কাটাতে হয়েছে তাকে। স্কুলের ছাত্র অবস্থায় ব্রিটিশ আমলে ৭ দিন কারাভোগ করেন, বাকি ৪ হাজার ৬৭৫ দিন তার জেলজীবন কাটে পাকিস্তান আমলে। ৫৪ বছরের জীবনে বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন, যা তার মোট জীবনের সিকিভাগ। পাকিস্তান সরকার বারবার তাকে কারারুদ্ধ করেছে। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করলে পাকিস্তান সরকার প্রথমবারের মতো তাকে গ্রেফতার করে। তারপর আরো বহুবার গ্রেফতার করা হয় তাকে। সর্বশেষ গ্রেফতার হন ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। সেদিন প্রথম প্রহরে হানাদার বাহিনী তাকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান নিয়ে যায় এবং কারাগারে বন্দি করে রাখে।

    আগেই বলেছি, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই বহির্মুখী মানুষ এবং সেই মহৎ রাজনীতিবিদ, যিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে সারাক্ষণ কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালবাসতেন। কিন্তু কারাগারে তো কাজ বলতে কিছু থাকত না। একটা নির্দিষ্ট সেলে বন্দী করে রাখা হতো তাকে। কারো সঙ্গে আড্ডা দেওয়া বা কথা বলার সুযোগ দেওয়া হতো না। কারাগারের রোজনামচায় সেই একাকীত্বের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি এভাবে: ‘আমার অবস্থা হয়েছে ‘‘পর্দানসিন জানানা’’র মতো, কেউ আমাকে দেখতেও পারবে না, আমিও কাউকে দেখতে পারব না। কেউ কথা বলতে পারবে না, আমিও পারব না। আমার উপর সরকারের কড়া নজর। জেলের ডিআইজি সাহেবকে বলেছি, জেলের আইন ভঙ্গ করে আমাকে একাকী রেখেছেন। জেল আইনে কাহাকেও বিনা অপরাধে Solitary Confinement রাখার নিয়ম নাই। এটা আইনবিরুদ্ধ, তবুও আপনারা আইন ভঙ্গ করে চলেছেন। ‘‘উপরের হুকুম’’ বলে আপনারা চুপ করে থাকেন। আমাকে ‘‘হুকুম’’ দেখান, আমি আপত্তি করব না। একাকী থাকবো যত কষ্টই হয়।”

    ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবি আদায়ের জন্য বঙ্গবন্ধু যখন আন্দোলন শুরু করলেন তখন তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি বন্দী থাকলেন। কাজের মানুষ তিনি; কিছু না কিছু কাজ তাঁকে করতেই হবে। এই সময়গুলোতে তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসার প্রেরণা ও অনুরোধে তিনি ডায়েরি লিখতে শুরু করলেন। যতবার তিনি জেলে গেছেন ফজিলাতুন্নেসা কিছু খাতা কিনে কারাগারে পৌঁছে দিয়েছেন। আবার যখন মুক্তি পেতেন খাতাগুলো সংগ্রহ করে নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিতেন। নিশ্চয়ই তার চিন্তা ছিল দূরদর্শী। এসব ডায়েরির লেখাগুলো যে একদিন বাংলার ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠবে তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কারাগারে বসে যে ডায়েরি লিখেছিলেন সেই ডায়েরি নিয়ে কারাগারের রোজনাচা বই প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। বইটির নাম রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানা।

    বইটির শুরুর দিকে যুক্ত হয়েছে কারাগার সম্পর্কে খুঁটিনাটি নানা তথ্য নিয়ে একটি লেখা। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬০ সালের ডিসেম্বর মাসে যখন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান তখন তার লেখা খাতাগুলির মধ্যে দুটি খাতা সরকার বাজেয়াপ্ত করেছিল। ২০১৪ সালে এসবির কাছ থেকে একটি খাতা উদ্ধার করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খাতাটির একটা নামও দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ‘থালা বাটি কম্বল জেলখানার সম্বল’। এই লেখাটিতে রয়েছে কারাজীবন, কয়েদিদের অনেক অজানা কথা, অপরাধীদের নানা কথা।প্রশ্ন উঠতে পারে, এতদিন কোথায় ছিল ডায়েরিগুলো? অর্ধ শতাব্দীরও বেশি হয়ে গেল ডায়েরিগুলোর বয়স। কেন এতদিন বই আকারে প্রকাশ করা হলো না? এই জবাব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বইটির ভূমিকা লিখেছেন তিনি। ভূমিকায় তিনি বিস্তারিত লিখেছেন ডায়েরিগুলো খুঁজে পাওয়া ও সংরক্ষণের ইতিহাস এবং এতদিন ধরে প্রকাশিত না হওয়ার কারণ।

    বঙ্গবন্ধু তার রোজনামচায় তুলে ধরেছেন সেই সময়কার রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পত্রপত্রিকার অবস্থা, শাসকদের নির্যাতন, ছয় দফা দাবি নিয়ে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ইত্যাদি বিষয়। ১৯৬৬ সালের ৮ জুন তারিখের ডায়েরির লেখাটি পড়লে বোঝা যায় কতটা নিষ্ঠুর ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘ভোরে উঠে শুনলাম সমস্ত রাত ভর গ্রেপ্তার করে জেল ভরে দিয়েছে পুলিশ বাহিনী। সকালেও জেল অফিসে বহু লোক পড়ে রয়েছে। প্রায় তিনশত লোককে সকাল ৮টা পর্যন্ত জেলে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ বৎসর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সের লোকও আছে। কিছু কিছু ছেলে মা মা করে কাঁদছে। এরা দুধের বাচ্চা, খেতেও পারে না নিজে। কেস টেবিলের সামনে এনে রাখা হয়েছে। সমস্ত দিন এদের কিছুই খাবার দেয় নাই। অনেকগুলি যুবক আহত অবস্থায় এসেছে। কারও পায়ে জখম, কারও কপাল কেটে গিয়েছে, কারও হাত ভাঙ্গা। এদের চিকিৎসা করা বা ঔষধ দেওয়ার কোনো দরকার মনে করে নাই কর্তৃপক্ষ।’

    একই বছরের ১০ জুন তারিখে বঙ্গবন্ধু তার মায়ের কথা লিখেছেন ডায়েরিতে, ‘পাকিস্তান কয়েম হওয়ার পরেই ১৯৪৮-এ যখন আমাকে বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তার করল, আবার ১৯৪৯ সালে গ্রেপ্তার করে, ১৯৫২ সালে ছাড়ল, তখন আমার মা আমাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘‘বাবা, তুই তো পাকিস্তান পাকিস্তান করে চিৎকার করেছিস, কত টাকা নিয়ে খরচ করেছিস―এ দেশের মানুষ তো তোর কাছ থেকেই পাকিস্তানের নাম শুনেছিল, আজ তোকেই সেই পাকিস্তানের জেলে কেন নেয়?’ এই কথাগুলো পড়ার সময় যে কোনো পাঠকের বুক ভারী হয়ে আসবে, চোখের পাতা ভিজে উঠবে। একই তারিখে শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘তাই ভাবি রাজনীতি মানুষকে কত নিষ্ঠুর করে। কয়েদিদেরও মায়া আছে, প্রাণ আছে, কিন্তু স্বার্থান্বেষীদের নাই। ভাবলাম রাতটা কাটাতেই কষ্ট হবে। কিন্তু কেটে গেল। জানালা দিয়ে অনেকক্ষণ বাইরে তাকাইয়া ছিলাম। দেখতে চেষ্টা করলাম ‘‘অন্ধকারের রূপ’’, দেখতে পারলাম না। কারণ আমি শরৎচন্দ্র নই। আর তার মতো দেখবার ক্ষমতা এবং চিন্তাশক্তিও আমার নাই।’

    এরকম অসংখ্য বেদনাপূর্ণ কথা ও তথ্য-উপাত্তে ভরা কারাগারের রোজনামচা। সেই সময়কার ইতিহাসকে জানা ও বোঝার জন্য এই বইটির পাঠ জরুরি। কতটা উত্তাল ছিল মুক্তযুদ্ধ পূববর্তী সময়গুলো, পাকিস্তান সরকার কী আচরণ করেছিল বাঙালিদের সঙ্গে, কেমন মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু, কেমন নেতা ছিলেন, কত উদার ও মানবপ্রেমী ছিলেন, বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় তিনি কতটা কষ্ট অনুভব করতেন, বইটি পাঠের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়। বইটি বাঙালির ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকবে। এই ডায়েরি পড়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ খুঁজে পাবে তাদের স্বাধীনতার উৎস।

    স্বকৃত নোমান: কথাসাহিত্যিক
    নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম, ৯ অক্টোবর, ২০২০, লিঙ্ক

    No tags.
    Avatar

    আব্দুল্লাহ আল মামুন

    More posts by আব্দুল্লাহ আল মামুন

    Leave a Comment

    Cancel reply

    You must be logged in to post a comment.

    NextPrevious

    বিভাগ

    • অডিও ও ভিডিও
      • ডকুমেন্টারি ও সংবাদ
      • বক্তব্য/ভাষণ/সাক্ষাৎকার
    • বই
    • বঙ্গবন্ধু
      • কারাজীবন
      • জন্ম ও বেড়ে ওঠা
      • পরিবার
        • এম এ ওয়াজেদ মিয়া
        • টিউলিপ সিদ্দিক
        • বঙ্গ মাতা
        • শেখ কামাল
        • শেখ জামাল
        • শেখ রাসেল
        • শেখ রেহানা
        • শেখ হাসিনা
        • সজীব ওয়াজেদ জয়
        • সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
      • বঙ্গবন্ধু বিরোধী ষড়যন্ত্র
      • বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড
      • বঙ্গবন্ধুর অর্জন ও স্বীকৃতি
      • বঙ্গবন্ধুর শাসনামল
        • অর্থনীতি
        • কৃষিক্ষেত্র
        • নবরাষ্ট্র পুনর্গঠন সংগ্রাম
        • পররাষ্ট্র নীতি
        • বাকশাল
        • বিবিধ
        • সামরিক ক্ষেত্র
        • স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
      • বাঙ্গালির মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু
        • ১৯৭১
          • ৭ মার্চের ভাষণ
          • উত্তাল মার্চ
          • পাকিস্তান কারাগারে বঙ্গবন্ধু
          • স্বাধীনতার ঘোষণা
        • ৬ দফা আন্দোলন
        • ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান
        • ৭০ এর গণনির্বাচন
        • আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
        • ভাষা আন্দোলন
      • বিষয়ভিত্তিক
        • বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন
        • শিশুবন্ধু বঙ্গবন্ধু
      • ভাষণ
    • বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে প্রকাশনা
      • উপসম্পাদকীয়
      • কবিতা ও গান
      • রচনা ও নিবন্ধ
      • সংবাদ
    • বহুমাতৃকতায় বঙ্গবন্ধু
    • বিবিধ
    • বিশেষ
      • বঙ্গবন্ধুর দর্শন

    সাম্প্রতিক

    • 16 January, 2021
      0

      ‘স্বাধীনতা চিরঞ্জীব, স্বাধীনতার নাম শেখ মুজিব’

    • 15 January, 2021
      0

      ৯ মাসে বন্দি বঙ্গবন্ধুর ওজন কমেছিল ৪০ পাউন্ড: শেখ হাসিনা

    • স্বাধীন হয়েছি, স্বাধীন থাকবো
      15 January, 2021
      0

      স্বাধীন হয়েছি, স্বাধীন থাকবো

    • 15 January, 2021
      0

      ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু

    © এই পোর্টালে প্রকাশিত কন্টেন্ট সমূহের স্বত্ব সংশ্লিষ্ট লেখক বা প্রকাশক কর্তৃক সংরক্ষিত। 📧 BangaBandhuOnline@gmail.com
    • মূল পাতা
    • বঙ্গবন্ধু
      • এক নজরে
      • জন্ম ও বেড়ে ওঠা
      • মুক্তি সংগ্রামে
        • ভাষা আন্দোলন
        • ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৬
        • আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ১৯৬৮
        • ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান
        • ১৯৭০ এর গণনির্বাচন
        • ১৯৭১
          • জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি
          • ২রা মার্চ
          • ৭ মার্চের ভাষণ
          • উত্তাল মার্চ
          • ২৫শে মার্চ
          • স্বাধীনতার ঘোষণা
          • মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণায় বঙ্গবন্ধু
          • পাকিস্তান কারাগারে বঙ্গবন্ধু
      • হত্যাকাণ্ড
      • শাসনামল
        • অর্থনীতি
        • কৃষিক্ষেত্র
        • স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
        • নবরাষ্ট্র পুনর্গঠন
        • অর্থনীতি
        • পররাষ্ট্র নীতি
        • সামরিক ক্ষেত্র
        • বাকশাল
        • বিবিধ
      • পরিবার
        • বঙ্গ মাতা
        • শেখ হাসিনা
        • শেখ কামাল
        • শেখ জামাল
        • শেখ রেহানা
        • শেখ রাসেল
        • এম এ ওয়াজেদ মিয়া
        • সজীব ওয়াজেদ জয়
        • সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
        • রাদোয়ান মুজিব সিদ্দিক
        • টিউলিপ সিদ্দিক
      • অর্জন ও স্বীকৃতি
      • ভাষণ
      • রচনা সমূহ
      • বঙ্গবন্ধু বিরোধী ষড়যন্ত্র
      • বিষয়ভিত্তিক
        • শিশুবন্ধু বঙ্গবন্ধু
        • বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও দর্শন
    • প্রকাশনা
      • গ্রন্থাবলি
      • রচনা ও নিবন্ধ
      • সংবাদ
      • উপসম্পাদকীয়
      • কবিতা ও গান
    • অডিও ও ভিডিও
      • বক্তব্য/ভাষণ/সাক্ষাৎকার
      • ডকুমেন্টারি ও সংবাদ
    • স্থির চিত্র
    • বিবিধ
    • বিশেষ
    • সামাজিক গণমাধ্যম
      • ফেসবুক
      • ইউটিউব
      • টুঁইটার
    Bangabandhu Online Archive