ফায়দা লুটেরাদের শায়েস্তা করতে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ

সম্পাদনা/লেখক: ইফতেখার মোহাম্মদ

 

ফায়দা লুটেরাদের শায়েস্তা করতে অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী তথা জনগণের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে যারা ফায়দা লুটছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামকে টেলিফোনে নির্দেশ দেন। বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সম্পদ নিয়োজিত করার নির্দেশও দেন তিনি। অস্ত্রোপচারের পর সুইস সরকারের আমন্ত্রণে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য বঙ্গবন্ধু জেনেভা অবস্থানকালে দেশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছিলেন। দেশের খাদ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলে তাকে জানানো হয়েছে যে, বিদেশ থেকে অব্যাহত খাদ্য সরবরাহ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত আছে। এসময় প্রধানমন্ত্রী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলামকে নির্দেশ দেন। তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টির জন্য অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

দৈনিক বাংলা, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭২
আরও কিছুদিন সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করতে হবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অপারেশনের স্থানে ব্যথা অনুভব করছেন এবং তার শারীরিক দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক নুরুল ইসলাম প্রকাশিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে বঙ্গবন্ধুকে আরও প্রায় এক পক্ষকাল সুইজারল্যান্ডে বিশ্রাম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়। বুলেটিনে বলা হয়, রাতে বঙ্গবন্ধুর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। তিনি তার দেহের সেলাইয়ের স্থানে ব্যথা অনুভব করছেন। তার শারীরিক দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে তার আরও প্রায় এক পক্ষকাল সুইজারল্যান্ডে অবস্থান করা প্রয়োজন বলে তার পরিকল্পনা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

 

দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ১৯৭২

ন্যায্যমূল্যের দোকানের জন্য আ.লীগের সুপারিশ

১৯৭২ সালের ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির এক জরুরি বৈঠকে দেশের বর্তমান অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— চোরাচালান বন্ধের জন্য সীমান্তের সব রুটে চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা, চোরাচালানকারীদের গুলি করে হত্যার জন্য আইন প্রণয়ন, জরুরি ভিত্তিতে জিনিসপত্র আমদানি, দেশের শতকরা ৫০ ভাগ মানুষের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও আংশিক রেশন। এছাড়া লাইসেন্স পারমিট বাতিল করে সরকারি ‘ন্যায্যমূল্যের দোকানের’ মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের বণ্টনের সুপারিশ করা হয়। দেশের শিল্প কারখানাগুলোর জন্য এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামাল আমদানির সুপারিশও করা হয়। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির বৈঠকে মজুতদারদের নির্বিশেষে গ্রেফতারের জন্য সরকারি প্রশাসন যন্ত্রকে সচল করে তোলা এবং মজুতদারি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে প্রতি জেলায় আওয়ামী লীগকে কন্ট্রোল রুম বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। দেশে মুদ্রাস্ফীতি রোধের জন্য অবিলম্বে উপযুক্ত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কমিটির বৈঠকে আরও দুটি উল্লেখযোগ্য সুপারিশ করা হয় এর একটি হলো—দুর্নীতিপরায়ণ আমলাদের শাস্তি প্রদান, আর অপরটি হলো লাইসেন্স পারমিট হোল্ডারদের নাম ও কোটার তালিকা প্রকাশের সুপারিশ।

 

দৈনিক বাংলা, ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭২

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্ট ভিসা চালু

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলের জন্য ৩১ আগস্ট মধ্যরাত থেকে পাসপোর্ট ও ভিসা প্রথা চালু করা হয়। সরকারিভাবে এ কথা জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের খবরে প্রকাশ, ভারতে ভ্রমণের জন্য যেসব পারমিট প্রদান করা হয়েছিল, তা এখন থেকে বাতিল বলে গণ্য হবে। স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে আরও জানানো হয়েছে, যারা পারমিট নিয়ে বর্তমানে ভারতের রয়েছেন পাসপোর্ট এবং ভিসা প্রথা চালু হবার দিন থেকে তাদের ভারতে এক মাস থাকার অনুমতি দেওয়া হবে। তবে ভারতে ভ্রমণের জন্য যারা পারমিট গ্রহণ করেছিলেন, অথচ ভারতে যাননি, তারা অবশ্যই সেই পারমিট পাসপোর্ট অফিসে জমা দেবেন।

আগস্ট ৩১, ২০২০, বাংলা ট্রিবিউন ( লিংক )

আরও পড়ুন