১৯৭২ সালের ১৫ মার্চ: ইন্দিরাকে ঢাকায় স্বাগত জানাবেন বঙ্গবন্ধু ও ফজিলাতুন্নেসা মুজিব

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন
১৯৭২ সালের ১৫ মার্চ। ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাগত জানানোর জন্য রাজধানী ঢাকা প্রস্তুত। বন্ধুরাষ্ট্রের প্রধান ইন্দিরা গান্ধীর সফরকালের কর্মসূচি প্রকাশ করা হয়। দুই দিনের এই সফরে তিনি শীতলক্ষ্যায় নৌবিহারও করবেন বলে জানানো হয়। এদিকে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ভারত,  চীন ও বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নানা বিষয়ে কথা বলেন।

স্বাগত জানাবেন বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব

ইন্দিরা গান্ধীকে রাজধানী ঢাকায় স্বাগত জানাবেন স্বাধীন বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম মুজিব, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের পক্ষ থেকে। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তেজগাঁও বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন। বরেণ্য কোনও অতিথিকে অভ্যর্থনা জানাতে এই প্রথম তিনি ঘরের বাইরে আসছেন বলে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য ভারত তার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার আসন্ন ঢাকা সফরের প্রাক্কালে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এই আশ্বাস দেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সহযোগিতা বিষয়ক আলোচনা তার আসন্ন ঢাকা সফরকালে সুনির্দিষ্ট রূপ নেবে কিনা, এ প্রশ্নের জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘এটা বলা কঠিন। তবে আমি নিশ্চিতভাবে সে আশা পোষণ করি। বাংলাদেশকে তারা সম্ভাব্য সবরকম সাহায্য দেওয়ার চেষ্টা করবে, আশা করে দিল্লিতে বাসসের প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের নেতার সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য ভারতের জনগণের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা নিয়ে যাচ্ছি।’

উপমহাদেশ, এশিয়া ও বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশ কত ভালোভাবে কাজ করতে পারে— এ প্রশ্নের জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ ও স্থিতিশীল থেকে জনগণের উন্নতির জন্য কাজ করি এবং ভালো সম্পর্ক রেখে শান্তির জন্য সহায়তা করতে পারি। অন্যান্য দেশও এই দৃষ্টিভঙ্গি নেবে বলে আমরা আশা করি। অধিকাংশ দেশের সমস্যা আমাদের মতো। সেই সমস্যাটা হলো দারিদ্র্য। যুদ্ধ অবস্থায় থাকলে শক্তির অপচয় হয়, যে শক্তিকে আমরা দারিদ্র্য দূর করার কাজে লাগাতে পারি।’

পাক-ভারত বিষয়ে

পাক-ভারত শান্তি অথবা নয়া সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রসঙ্গে ইন্দিরা বলেন, ‘পাকিস্তান কী জন্য যুদ্ধ করবে তা আমার চিন্তায় আসে না। তবে গোলমাল যে হবে না এ কথা বলা কঠিন। তারা অস্ত্র পায় এবং বাইরের সাহায্য ও উৎসাহ পায়।’ পাকিস্তানি শাসকদের মনোভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা সবসময় বলে পাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ, ভারত তাদের শত্রু। কিন্তু আমরা প্রথমে বলছি— আমাদের দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ নয়, চুক্তি হওয়া দরকার। বড় কথা হলো অর্থনৈতিক, যে অর্থ প্রতিরক্ষায় খরচ করে, সেই অর্থ খুব সহজেই উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা যায়।’

যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নতির বিষয়ে তিনি ভাবছেন কিনা, ভারত ও বাংলাদেশের প্রতি মনোভাবের পরিবর্তন দেখছেন কিনা প্রশ্নে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘উন্নতি হবে বলে আশা করি। তবে তার কোনও চিহ্ন দেখছি না।’ চীন-ভারত সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সমস্যা উদ্ভবের আগে তাদের বার্তায় নরম ভাব দেখা গেলো। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকালে তাদের কথাবার্তা কঠোর হলো। নিকট ভবিষ্যতে আবারও নরম ভাব আসবে কিনা জানি না।’

যুদ্ধাপরাধ বিষয়ে

যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য কিছু পাকিস্তানি বন্দিকে বাংলাদেশ পাঠালে তৃতীয় কোনও দেশ অথবা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হস্তক্ষেপ করবে বলে তিনি মনে করেন কিনা, জবাবে ইন্দিরা গান্ধি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান আপত্তি জানাবে।’ অন্য কোনও দেশ আপত্তি জানাবে কিনা জানেন না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা কিংবা না করা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের নিজস্ব ব্যাপার।’

একাত্তরের এই দিনে

১৯৭১ সালের এই দিনে (১৫ মার্চ) ইয়াহিয়া ঢাকা আসেন। বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের কোনও ব্যবস্থা সেদিন ছিল না। সফরসূচিতেও ছিল গোপনীয়তা।পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বিমানবন্দর থেকে গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের এটা ছিল অষ্টম দিন। এ সময়ে দেশ পরিচালিত হতো বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নির্দেশাবলীতে। তাজউদ্দিন আহমেদ মাঝে-মধ্যে সেসব নির্দেশাবলীর ব্যাখ্যা দিতেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছাড়া সবকিছুই উপেক্ষা করছিল বাংলার জনগণ।

আরও পড়ুন