সবখানে তাঁর পায়ের চিহ্ন

সম্পাদনা/লেখক: আব্দুল্লাহ আল মামুন

সবখানে তাঁর পায়ের চিহ্ন আঁকা। সবখানে। সবখানে। যে মানুষটা নেই তাঁর পায়ের চিহ্ন থাকে কি ভাবে ? এখানে সেখানে, ওখানে। সৈকত পাগল হয়ে যায়। তার চারদিকে লোকটার পায়ের চিহ্ন দেখতে পায়। যেন এই মাত্র কালো সু পড়ে লোকটা তার পড়ার ঘরের পাশদিয়ে চলে গেলেন। ভোরের শিশির ঝড়া ঘাসে যখন সৈকত হাঁটে, দেখতে পায় সেই পায়ের চিহ্ন। মধুমতি নদীটির শাখা নদী বাইগার। সেই বাইগারে নাকি লোকটা সাঁতার কাটত। কর্ণফুলীর পাশে দিয়ে যাবার সময় সৈকত দেখতে পায় সেই লোকটা সাঁতার কাটছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সৈকত। সৈকত দেখে তাদের ঘরের ওয়ালে টাঙানো সোনালি ফ্রেমে বাঁধা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

সৈকত সবে মায়ের বুকের দুধ ছেড়েছে। পিসিমা কাকাদের সাথে বসে নাস্তা করে, ভাত খায়। মা তাকে খাইয়ে দিতে চাইলেও খাবে না। তার কাছে মজা লাগত কাকা, পিসিমাদের হাতে খেতে। তাদের সাথে ঘুরে বেড়াতে। তারাই তাকে নিয়ে যেতো আদর করে। কত কি চিনিয়ে দিতো তারা। ওটা বেড়াল, ওটা কাক। ওটা জবা ফুল। খেতে বসলে এটা ইলিশ মাছ, কই মাছ ইত্যাদি নাম বলে বলে সৈকতকে খাওনো হতো। তাদের ঘরের বড় বারান্দার ওয়ালে নানা গুণিজনের ছবি প্রদর্শনীর মতো রাখা ছিল। সব ছবিই বাঁধাই করা। ওখানে সৈকতের মা বাবার সাথে তার নিজেরও একটি ছবি ছিল। তবে সবচেয়ে বড় আয়নার ফ্রেমে বাঁধা ছবিটা ছিল বঙ্গবন্ধুর। মেজ কাকা বলতেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সৈকতের ঠাম্মা বলতেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিব।
সৈকতের আজো মনে আছে , ঠাম্মা বলতেন শেখ মুজিবের এক কথায় বাঙালি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের কত কথা ঠাম্মার মুখে শুনেছে সৈকত। যতই বড় হচ্ছিল ততই যুদ্ধের নানা কথা শুনে সৈকতের মনে হতো গল্প শুনতেছে। বড় হয়ে সেই কথা গুলো দিয়েই সৈকত লিখেছে ‘যুদ্ধদিনের গল্প’ শিরনামে একটি ছোটদের উপন্যাস। সব কি লিখতে পেরেছে ? আরো কত কথা রয়েছে। সৈকত বলে, ঠাম্মার মুখে মুক্তিযুদ্ধের এত ঘটনা অঘটনার কথা শুনেছি মনে হয় আরো দুতিনটি উপন্যাস লিখলেও সেই শোনা গল্প শেষ হবে না।
সৈকত আজকে অনেক কিছু বুঝে, অনেক কিছুই জানে। তবে মুক্তিযুদ্ধের একদিনের স্মৃতি সে ভুলতে পারে না। ঠাম্মা প্রায়শ বলতেন, শেখ মুজিব কে পাকিস্তানিরা ধরে কোথায় নিয়ে গেছে কেউ জানে না। একদিকে শেখ মুজিবকে লুকিয়ে রেখে আরেক দিকে বাঙালিদের উপর মিলিটারি লেলিয়ে দেয়া হয়েছে।

সেই স্মৃতিটা হলো,‘কয়েকদিন ধরে সৈকতদের এলাকায় মিলিটারীরা মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছিল। মানুষ ভয়ে ভয়ে অস্থির। এর মধ্যে একদিন কয়েকটি বাড়িতে আগুন দিয়েছে মিলিটারি আর রাজাকার মিলে। তারপর খেকে দিনের বেলায় কেউ আর ঘরে থাকে না। সবাই আশেপাশে ঝোপ জঙ্গলে লুকিয়ে দিন কাটাচ্ছিল। এমন অবস্থায় একদিন সকাল দশটার দিকে লোকমুখে রব উঠেছে আসতেছে, আসতেছে। মানে মিলিটারি আসতেছে। সবাই যে যেদিক পারছে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করছে। সৈকত ছিল সেদিন ঘুমিয়ে। সবাই বাড়ির পেছনে খাস্তগীরদের পুকুরের পশ্চিম পাড়ের জঙ্গলে লুকিয়ে গেছে। হঠাৎ সৈকতের মা চিৎকার দিয়ে বলে উঠল সৈকত নেই। তাকে ঘুমে রেখে সবাই ঘর ছেড়েছে। সবাই কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে। তবে কেউ আর তাকে আনতে ঘরের দিকে যেতে চাচ্ছে না। মাকেও সবাই বারণ করতেছে না যাওয়ার জন্য। শেষে সৈকতের সেজ পিসি রত্না। তিনি ১২-১৩ বছরের তখন। তিনিই সাহস করে চুপি চুপি ঘরে গিয়ে ঘুমন্তাবস্থায় কোলে করে সৈকতকে নিয়ে ঐ পুকুরের পাড়ে পৌছে আর দেরি করেনি, ছোট্ট সৈকতকে মাথার উপর নিয়ে পুকুরের মাঝাামাঝি কাদা জলে হেঁটে সোজা ঐ পাড়ে । সবাই তো অবাক! বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। দু‘একজন চেছামেছি করে রত্নাকে বারন করলেও তিনি শুনেননি। কারন পুকুরের পাড় ঘুরে যেতে হলে সময় লাগবে বেশি। তারচেয়ে পুকুরের পানি কম এবং ভরাট থাকায় পিসি দুঃসাহস দেখিয়েছেন। আজকে তিনিও দুনিয়ায় নেই। অকালে মৃত্যুবরন করেছেন।

সৈকতের চার পিসি,দুই কাকা। তাদের আদর স্নেহ ভালোবাসায় সৈকতের বেড়ে ওঠা। মা বাবার চেয়ে তারাই অধিক স্নেহ করতেন। তারাই চিনিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে। সেই ছোট্ট বয়সেই বঙ্গবন্ধুকে জানার এবং দেখার সুযোগ হয়েছে সৈকতের। কাছে থেকে কত শিশু বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পেয়েছে বলো।
চট্টগ্রামের পটিয়া থানা একটি ছোট শহর। বঙ্গবন্ধু পচাঁত্তরের কোন মাসে সেই পটিয়া সফর করেছিলেন। পটিয়া আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন। হেলিকাপ্টারে করে চলে যাবার সময় সৈকতও হাত নেড়ে বিদায় জানিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। সেই স্মৃতিসুখ চোখে আজো ঝলঝল করে উঠে তার। সুখ পায় এই ভেবে, আমার মতো অনেক শিশুর বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি।

সবার মুখে মুখে কদিন ধরে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা শুনে আসছে সৈকত। ছোট্ট শহর পটিয়ায় তার আগমন হবে। সবার মুখে শুনে শুনে তার ছোট্ট মনের ভেতর শুধু ঘন্টার মতো বাজতে ছিল ‘আমিও যাবো’। কোথায় যাবো তা জানি না। শুধু জানি বঙ্গবন্ধু আসবেন তাকে দেখতে যাবো। ছবির বঙ্গবন্ধু কেমন, ছবির মতো কি না তা দেখতে হবে। যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই সৈকতের ছোট্টমনে বঙ্গবন্ধুকে দেখার ব্যাকুলতা বাড়তেছিল। কাউকে কিচ্ছু বলে না। শুধু নিজে নিজেই ভাবে। বঙ্গবন্ধু কোথায় আসবেন বা সেই বা কোথায় যাবে। কি ভাবে যাবে কিচ্ছু জানে না। শুধু জানে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যাবে সৈকত।
সৈকতের তখনও স্কুলে যাওয়া শুরু হয়নি। ঘরেই দাদুর কাছে বাল্যশিক্ষা পাঠ নিচ্ছিল। সারদিনই তো খেলা আর খেলা। একদিন সহপাটি রনধীর আর যতিনকে সৈকত বলে ‘আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখতে যাবো’।
সৈকতের কথায় ওরা কিছুই জানতে চাইল না। সৈকত ওদের সাথে পুকুর পাড়ে মাটি নিয়ে খেলতে ছিল। অনেক ক্ষণ পরে যতিন জিগেস করে বঙ্গবন্ধুটা কে। উনার বাড়ি কোথায়? সেদিন তার প্রশ্নের কোন জবাব সৈকত দিতে পারোনি। শুধু বার বার বলতে ছিলা বঙ্গবন্ধুকে চিনিস না ? এক পযায়ে তাদেরকে টেনে ঘরে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা দেখিয়ে সৈকত বলে, উনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। মেজ কাকা যে বলতেন জাতির পিতা শেখ মুজিব, তাদেরকে সৈকতও বলে, জাতির পিতা শেখ মুজিব। তবে তখন জাতির পিতার কি অর্থ তা কিন্তু জানতো না সৈকত । কেন জাতির পিতা বলা হতো তাও জানা ছিল না। তবে বড় হয়ে জেনে নিয়েছে কেন তিনি জাতি রাষ্ট্রের পিতা।

সকাল থেকে সৈকতদের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে, সাইকেলে ছুটে চলছে । বঙ্গবন্ধু আসতেছে। বঙ্গবন্ধুকে সবাই দেখতে যাচ্ছে। বেলা বাড়তেই একটি মিছিল নিয়ে যাচ্ছিল কিছু মানুষ। সৈকতের এক জেঠা ওর হাত ধরে বলল, জেঠা শেখ মুজিবকে দেখতে যাবা ? সৈকত উনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। উনি বললেন, সাট গায়ে দিয়ে আসো। এই কথা শুনেই সৈকত আর দেরি করেনি এক দৌড়ে ঘরে গিয়ে মাকে বলে সার্ট পরিয়ে দিতে। যেই বলা হলো শেখ মুজিবকে দেখতে যাচ্ছি, অমনি মা তাকে বারণ করে দিল, না তুমি ছোট মানুষ । সেখানে গেলে হারিয়ে যাবে। তোমার কাকা আসলে যেও।
দূর কাকা কখন আসবে। সৈকত ভ্যা করে কেঁদে দেয়। তুক্ষণ জেঠাও এসে হাজির। তিনি মাকে বলে সৈকতের হাত ধরে নিয়ে চলল।

জেঠার সাথে হেঁটে কুলাতে পারছিল না ছোট্ট সৈকত। তবু ছোট ছোট পায়ে দৌড়াচ্ছিল। একটু পরেই ওরা পৌছে যাই মাঠে। যেখানে বঙ্গবন্ধু আসবেন। মানুষ আর মানুষ। যত দূর চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। মাঝে মাঝে লোকজন শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে, শুভেচ্ছা স্বাগতম, বঙ্গবন্ধুর আগমন। অবশেষে দুপুরের মেঘ ভাঙ্গা রোদ্দুরে তিনি হেলিকাপ্টারে চড়ে নামলেন। হাজার হাজার মানুষ তাঁকে দেখার জন্য ছুটছে মঞ্চের দিকে। জেঠা সৈকতকে মাঠের পাশের একটি দোকানে বসিয়ে তিনি ও ছুটলেন। তখন আবার সৈকতের মনটা ছোট হয়ে গেল। জেঠা আবার ফেলে চলে না যাই। কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না সৈকত। শুধু মাইকে কি যে বলছে কারা সেই শব্দ শুনে শুনে ভয় পাচ্ছে। বার বার মানুষের ভীড়ে খুঁজে বঙ্গবন্ধুকে। সেই কালো কোট পড়া চোখে কালো চশমা। না। তেমন কাউকে দেখতে পায না। তবে মঞ্চের লোকজন গুলোকে আবছা আবছা দেখতে পারছিল অনেক কষ্টে। দোকানদার সৈকতকে তার শোকেজের উপল দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল বাবু, দেখতে পাচ্ছো ? মাথা নেড়ে সায় দেয় সৈকত। অনেকক্ষন পরে জেঠা এসে বলল, জেঠা বঙ্গবন্ধুকে দেখলে। তখনও মাথা নেড়ে সায় দেয় সৈকত। কিন্তু জেঠা বুঝতেছে সৈকত ঠিক বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি। তিনি ওকে আরো সামনে নিয়ে উচু কিসের উপর যেন দাঁড়িয়ে কোলে করে মাথার উপর ধরে বলল, সৈকত ঐ দেখ ঐ দেখ, কালো কোট পড়া লোকটা বঙ্গবন্ধু। এবার খুব স্পষ্ট করে দেখতে পেল বঙ্গবন্ধুকে। সত্যিই ছবির বঙ্গবন্ধুর সাথে পুরো মিল। কী সুন্দর লাগছিল উনাকে। সবাই উনাকে ঘিরে বসেছিল। মানুষ আর মানুষ। একটা মানুষকে দেখতে এতে লোক জড়ো হওয়া। সৈকতের ভেতরে শুধু প্রশ্ন। তিনি মানুষ নাকি দেবতা। যাকে মানুষ এত কষ্ট স্বীকার করে পায়ে হেঁটে দূর দূরান্ত থেকে দেখতে আসা।

তার কয়েক মাস পরের ঘটনা। যে ঘটনার কথা সৈকত বড় হয়ে তার ডাইরিতে লিখেছে, খুব সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। কার মুখে যেন শুনলাম সেই বঙ্গবন্ধুকে কারা হত্যা করেছে। শুধু বঙ্গবন্ধুকে নয়, তার পরিবারের সকলকে। দশ বারো বছরের তাঁর ছোট্ট শিশু, যার নাম রাসেল। তাকেও ঘাতকরা বুলেটে বুলেটে ঝাঝরা করে দিয়েছে। আমি স্তদ্ধ হয়ে যায়। কি করে সম্ভব। যে লোকটাকে মানুষ এতো ভালোবাসে, যে লোকটার প্রতি মানুষের এত মমতা, যে লোকটার ডাকে মানুষ ছুটে গিয়েছিল যুদ্ধে। একে একে প্রাণ দিয়েছে ত্রিশ লাখ লোক। সেই লোকটাকে হত্যার করার এত দুঃসাহস কার হয়েছে? যার ডাকে মানুষ স্বাধীনতা আনবে বলে নিজের জীবনকে তুচ্ছু করে ঘর ছেড়েছে। সেই দেশে এমন ঘাতক জম্ম নিল কি করে।

কারো মুখে কোন কথা নেই । সবাই যেন ভয়ে ভয়ে আছে। প্রতিদিনের মতো আমি মেজকাকার সাথে বাবার দোকানে যাচ্ছিলাম। পথে পথে লোকজন চলাচল করছে ঠিকই,তবে অন্যদিনের মতো স্বাভাবিক মনে হলো না। সবাই কি জেনে গেছে বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা ? কি ভাবে। দূর আমি তো বোকার মতো বললাম। রেডিওতে বার বার খবরে বলা হচ্ছিল তো।

কাকা আমার হাত ধরে পথ চলছে। বড় গাড়ি যেন রাস্তায় চলছে না। শুধু রিকসা আর রিকসা। টুং টাং করে যাচ্ছে আমাদের পাশ দিয়ে। যেই বাবার দোকানে পৌছি, ওমা এ কী কান্ড ! বাবা দেখি একজন লোককে মাথায় পানি ঢালছেন। পাঁচ সাত জন লোক জড়ো হয়েছে। সবাই যেন কাঁদছে। আমি কিছুই বললাম না। কাকা আমাকে নিয়ে দোকানের ভেতরে ঢুকে বসে পড়ল। কিছুক্ষণ লোকটার মাথায় পানি ঢালার পর বাবা দোকানে ঢুকেই কাকাকে আস্তে করে বললেন, আমাকে নাস্তা খাওয়ায়ে বাড়ি চলে যেতে। আমি বাবার এমন কথা শুনার জন্য মোটেই প্রস্তুুত ছিলাম না।

লোকটা নাকি আওয়ামী লীগ করতো। নেতা। বাবার বন্ধু হয়। বাবা আর উনি নাকি এক সাথে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর কথা শুনে বেহুশ হয়ে পড়ে। লোকটাকে কয়েকজন রিকসায় তুলে কোথায় যেন নিয়ে গেলো।

কাকা আমাকে খগেন্দ্র মহাজনের চায়ের দোকানে নিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু কিছ্ইু আমি খেতে পারিনি। আমি কেনো খেতে পারিনি। আমি তো বঙ্গবন্ধুর কেউ নয়। তিনিও আমার কেউ নয়। তবে। তবে তার মুত্যুর খবর জেনে আমার কেন কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। আমি তো শুধু তাকে একদিন অনেক দূর থেকে দেখেছি।

আমাদের ঘরের বারান্দায় বঙ্গবন্ধুর সোনালি ফ্রেমে বাঁধা হাসিমাখা যে ছবিটা ছিল সেটা খুলে ফেলা হয়েছে। ছবিটা ছাদের ঘরে কাপড় মুড়িয়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। এ ছবি রাখা নাকি বিপদ। যে লোকটাকে মেরে ফেলা হয়েছে, তার ছবি ও রাখা যাবে না ? কেন। লোকটা কি দোষ করেছে। নাকি স্বাধীনতা আনাটা তার অপরাধ ছিল। আমি নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে যাচ্ছিলাম। কয়েকদিন পর আমি চুপি চুপি ছাদে উঠে ছবিটা অনেক কষ্টে খুঁজে বের করি। তারপর ছবিটার উপর ঝুকে পড়ে দেখছিলাম। কতক্ষণ দেখতেছিলাম জানি না। মা কি জন্যে জানি ছাদে উঠে আমার কান্ড দেখে শুধু তাকিয়েছিল। পরে আমাকে নিয়ে ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে। সেই থেকে আমার চারপাশে আমি বঙ্গবন্ধুকে খুঁজি। আমি দেখতে পাই উনাকে। আমার সাথে তিনি কথা বলেন। আমি যা জানতে চাই সব প্রশ্নের জবাব দেন। আমার চারপাশে যা কিছু সবটাতে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাই। তাঁর পায়ের আওয়াজ আমার কানে বাজে। তার পায়ের চিহ্ন দেখতে পাই সবখানে, সবখানে। তোমরাও কি দেখতে পাও।

শিবুকান্তি দাশ

আরও পড়ুন